১৪০ কোটি ভারতীয়’র আশা-আকাঙ্খা বহন করে চাঁদের দিকে ছুটে চলেছে এটি। কয়েকদিন পরই আগামী ২৩ আগস্ট এটি চাঁদের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার। চন্দ্রাভিযানে চন্দ্রযান-৩’র প্রপালশন মডিউল থেকে ল্যান্ডার ‘বিক্রমে’র বিচ্ছিন্ন হওয়ার এই পদক্ষেপকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইসরো।
এই ল্যান্ডার বিক্রমের মধ্যেই রয়েছে রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদের মাটিতে বিক্রমের অবতরণের পরই বেরিয়ে আসবে এটি। এরপর চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ঘুরে ঘুরে পরীক্-নিরীক্ষা চালাবে। গত বুধবার (১৬ আগস্ট) শেষবারের মতো নিজের কক্ষপথ বদল করে চাঁদের আরও কাছাকাছি পৌঁছায় চন্দ্রযান-৩। এ সময় চাঁদের থেকে ১৫৩ কিমি x ১৬৩ কিমি উচ্চতায় কক্ষপথে চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করছিল এটি।
এরপর বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) মহাকাশযানটির প্রপালশন মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ল্যান্ডার বিক্রম। আর মাত্র ৬ দিন পরই চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা বিক্রমের। গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় ‘চন্দ্রযান-৩’-কে। উৎক্ষেপণের ২২ দিন পর যানটি গত ৫ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে।
এর আগে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে পৃথিবীর কক্ষপথেই ঘুরছিল মহাকাশযানটি। এই সময় এক এক করে পাঁচবার কক্ষপথ পরিবর্তন করানো হয় তার। এরপর গত ১ আগস্ট চাঁদের বলয়ে (স্ফিয়ার অফ ইনফ্লুয়েন্স) প্রবেশ করে চন্দ্রযান-৩।
এরপর ৫ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে এটি। এরপর ধাপে ধাপে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে করতেই চাঁদের আরও কাছাকাছি আসে চন্দ্রযান-৩। জানা গেছে, বিক্রম যখন চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে থাকবে, তখন এর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর ধীরে ধীরে এটি নেমে যাবে চাঁদের দিকে।
এরপর ল্যান্ডার বিক্রম যখন চাঁদের মাটি থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় থাকবে, তখন সেটি পালকের মতো করে নীচের দিকে নামবে শুরু করবে। এতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর খুলে যাবে বিক্রমের দরজা। সেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসবে রোভার প্রজ্ঞান।
এরপর প্রজ্ঞান চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে। চাঁদ আদৌ মানুষের বসবাস উপযোগী কিনা, তা-ই খতিয়ে দেখবে চন্দ্রযান ৩-এই রোভার। ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশে অবতরণ করার কথা ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞানের। এলাকাটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এখন পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, তাদের কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করতে পারেনি। চাঁদের নিরক্ষীয় অঞ্চলের কাছে অবতরণ করেছে তারা। এরই মধ্যে ভারতের চন্দ্রযান-৩-কে টেক্কা দিতে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে রাশিয়ার লুনা-২৫। ভারতের প্রায় এক মাস পর গত সপ্তাহে (১১ আগস্ট) এই মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছিল রাশিয়া। গত বুধবার (১৬ আগস্ট) এটি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে। সেই সঙ্গে মহাকাশ থেকে ছবিও পাঠিয়েছে।
আগামী ২১ থেকে ২৩ আগস্টের মধ্যে এটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার পরিকল্পনা করছে। তবে দুটি চন্দ্রযান যদি একই সময়ে তথা ২৩ আগস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে তাতে কোনো সমস্যা হবে না, এমনটাই জানিয়েছে রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক