
ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মঙ্গলবার শুরু হওয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর (আসিয়ান) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বার্ষিক বৈঠক শেষ হয়েছে। তিনদিন ধরে চলা এই বৈঠকে মিয়ানমারের প্রাণঘাতী রাজনৈতিক সংকট আর দক্ষিণ চীন সাগরের জলসীমা নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা স্থান পেয়েছে।
জ্যেষ্ঠ চীনা কূটনীতিক ওয়াং ই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওয়াং ই আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতির গভীর পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
দক্ষিণ চীন সাগরের জলসীমা নিয়ে চীনের সঙ্গে আসিয়ান জোটের কিছু সদস্য রাষ্ট্রের বিরোধ চলছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এমন সময় আসিয়ানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এই বৈঠক হচ্ছে, যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গলার কাঁটা হয়ে রয়েছে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জোটটির সক্ষমতা এবং এর ঐক্য ঘিরে সন্দেহ বাড়ছে। চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে সবার ওপরে স্থান পাচ্ছে মিয়ানমারের জন্য আসিয়ানের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ঘাটতি।
বৈঠকে মিয়ানমারে চলমান সংঘাত মোকাবিলায় আঞ্চলিক ঐক্যের ডাক দিয়েছেন আসিয়ানের নেতারা।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে মিয়ানমারের জান্তা সরকার বিক্ষোভ ঠেকানোর নামে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে। এ নিয়ে আসিয়ানের নিশ্চুপ ভূমিকার তীব্র সমালোচনার মুখে এপ্রিলে একটি পাঁচদফা শান্তি প্রস্তাব আনা হয়, সেখানে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি। সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো ওই শান্তি পরিকল্পনায় মিয়ানমারের সামরিক শাসকরা তাৎক্ষণিকভাবে আসিয়ানের সঙ্গে একমত হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে তেমন কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।
জুনে প্রকাশিত এক জাতিসংঘ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কঠোর দমন-পীড়নে ৩ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ২২ হাজারের বেশি মানুষ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক সম্প্রতি মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এসব ঘটনার তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। পাশাপাশি দেশটির সামরিক জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ১২-১৮ জুলাই, ২০২৩ থেকে ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডে একটি ফলপ্রসূ ছয় দিনের, দ্বি-দেশীয় সফর শেষ করেছেন৷ এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সফরে তাকে ভারত-আসিয়ান বিন্যাসের অধীনে বৈঠকে যোগ দিতে দেখা গেছে, বিমসটেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের রিট্রিট এবং সেইসাথে মেকং গঙ্গা সহযোগিতা ব্যবস্থার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক।
তার সফরের সময়, তিনি ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ এবং ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতিগুলিকে এগিয়ে নিয়েছিলেন, যার লক্ষ্য তার প্রতিবেশীদের সাথে ভারতের সম্পর্ক জোরদার করা এবং আঞ্চলিক একীকরণকে উন্নীত করা।
ইএএম জয়শঙ্কর ১৩ জুলাই, ২০২৩-এ ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় সিঙ্গাপুরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণানের সাথে আসিয়ান-ভারত বিদেশ মন্ত্রীদের সহ-সভাপতিত্ব করেন। পরে তিনি আসিয়ান-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠককে “উষ্ণ এবং ফলপ্রসূ” বলে বর্ণনা করেন। তিনি অনুষ্ঠিত আলোচনার বাস্তবায়ন এবং আন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় সমস্যাগুলিতে ফোকাস করার লক্ষ্যযুক্ত ক্ষেত্রগুলিও তুলে ধরেন।
পাশাপাশি, ইএএম জয়শঙ্কর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালাকৃষ্ণনের সঙ্গে আলাদাভাবে দেখা করেন। তিনি ভারত ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাস্তবায়নে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো এরিওয়ান পেহিন ইউসুফের সাথে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার স্থিতিশীল বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং বাণিজ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, গতিশীলতা এবং মহাকাশ সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর ফোকাস করেছেন। খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক