
সার্বভৌম সবুজ বন্ড আনার সঙ্গে সঙ্গে ভারত সরকার তার জলবায়ু লক্ষ্য ও সবুজ উচ্চাকাঙ্ক্ষার অর্থায়নের জন্য একটি নতুন পরিসর খুলেছে, এবং অবশেষে সবুজ সার্বভৌম ক্লাবে প্রবেশ করেছে। অর্থমন্ত্রক ২০২২–২৩ অর্থবর্ষে টাকার অঙ্কে উপলব্ধ একটি সার্বভৌম সবুজ বন্ডের মাধ্যমে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সামগ্রিক ঋণের প্রায় ১ শতাংশ, সংগ্রহ করার কথা ঘোষণা করেছিল৷ সার্বভৌম সবুজ বন্ড যদিও বিশ্বব্যাপী বিষয়ভিত্তিক বন্ড বাজারে দেরিতে প্রবেশ করেছে, তা সত্ত্বেও স্থিতিশীল আর্থিক অস্ত্রাগারের একটি মূল অংশ হিসাবে তা কিন্তু দ্রুত উঠে আসছে। বন্ডগুলির লক্ষ্য সরকারগুলিকে তাদের প্যারিস এবং এসডিজি লক্ষ্যগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থ স্থানান্তর করতে সহায়তা করা।
অনুরূপ মেয়াদের সার্বভৌম বন্ডের সুদের হারের তুলনায় ৫–৬ বেসিস পয়েন্ট কম হারে ইস্যু বিক্রির মাধ্যমে প্রথম দফার কাজ প্রত্যাশার চেয়ে ভাল হয়েছে। বেশিরভাগ বিশ্লেষক সার্বভৌম দ্বারা ভ্যানিলা (অ–সবুজ) অফারগুলির তুলনায় ২–৩ বেসিস পয়েন্ট বাড়তি সুবিধার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) অনুসারে ইস্যুটি চার গুণেরও বেশি সাবস্ক্রাইবড হয়েছিল, এবং মোট ৯৬টি বিডের মধ্যে পাঁচ বছরের বন্ডটি ৩২জন বিনিয়োগকারীর কাছে এবং ১০ বছরেরটি ৫৭ জন বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। পাঁচ বছরের বন্ডের দাম ৭.১০ শতাংশ এবং ১০ বছরের বন্ডের দাম ৭.২৯ শতাংশ ছিল। ছয় বেসিস পয়েন্ট ‘গ্রিনিয়াম’ (সবুজ প্রকল্পের জন্য সংগৃহীত ঋণের জন্য বিনিয়োগকারীরা যে অধিক মূল্য প্রদান করেন) কম। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘটনাটি এই কারণে উৎসাহব্যঞ্জক যে ইস্যুটি স্থানীয় মুদ্রায়, দেশে এবং স্থানীয় সবুজ বাজারে সবে ডানা মেলল।
বন্ড ইস্যু করার ঠিক আগে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে নিয়ামকেরা একটি ভাল বাজার প্রতিক্রিয়া আকর্ষণ করার জন্য কয়েকটি মৌলিক পদক্ষেপ করেছিলেন। নিবেদিত আন্তর্জাতিক ইএসজি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য আরবিআই অনাবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য নিলাম উন্মুক্ত করেছিল ফুললি অ্যাক্সেসেবল রুট –এর মাধ্যমে, যা ‘নির্দিষ্ট সিকিউরিটিজ’–এর জন্য বিনিয়োগের সর্বোচ্চ মাত্রা থেকে বিদেশি অংশগ্রহণকে ছাড় দেয়। স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বিমা নিয়ামক সংস্থা ইনসিওরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (আইআর ডিএআই) এই বন্ডগুলিকে বিমা সংস্থাগুলির নির্ধারিত পরিকাঠামো বিনিয়োগের অংশ হিসাবে গণ্য করার অনুমতি দিয়েছিল। ব্যাঙ্কগুলির জন্য আরবিআই জানিয়ে দেয় যে সবুজ বন্ডগুলিতে বিনিয়োগ স্টাটুটরি লিকুইডিটি রেশিয়ো (এসএলআর)–এর অংশ হিসাবে স্বীকৃত হবে। এ হল আমানতের ন্যূনতম শতাংশ, যা ব্যাঙ্কগুলিকে সরকারি সিকিউরিটিগুলির মতো লিকুইড অ্যাসেটে বিনিয়োগ করতে হয়৷ ইস্যুটির বৃহত্তর অংশ স্বাভাবিকভাবেই পিএসইউ ব্যাঙ্ক ও বিমা সংস্থাগুলি নিয়েছে, আর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা এই সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সতর্কতার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে।
স্থিতিশীল বিনিয়োগের জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে এবং স্থানীয় চাহিদাকে উন্মুক্ত করে সর্বাধিক সুবিধা নেওয়ার লক্ষ্যে ভারতের আর্থিক নীতি ও নিয়ামক ব্যবস্থা কতটা উদ্যোগী হতে পারে বা সম্ভাব্য প্রণোদনা কতটা ত্বরান্বিত করতে পারে, তার জন্য এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের আকারটি বড়। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ভারতে বছরে সবুজ অর্থের প্রবাহ এখনও ২০৩০ সাল পর্যন্ত হিসাবমতো যা বার্ষিক প্রয়োজন (১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) তার মাত্র এক–চতুর্থাংশ। ভারতের অর্থনীতির আকার এবং এর সবুজ রূপান্তরের অর্থায়নের জন্য বিশাল তহবিলের প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে মূলধনী বাজারের মাধ্যমে সংগৃহীত বিষয়ভিত্তিক ঋণ (থিম্যাটিক ডেট) একটি বিরাট সুযোগ দেয়।
সবুজ, সামাজিক ও টেকসই (জিএসএস) বন্ড নিয়ে গঠিত স্থিতিশীল বন্ড বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বাজার ২০২২ সালের জুন মাসে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, আর তার মধ্যে সবুজ আখ্যানবস্তু (গ্রিন থিম) ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছে বৈশ্বিক বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে। অপ্রকাশিত ডেটাবেস ক্লাইমেট বন্ড ইনিশিয়েটিভ অনুসারে ভারতীয় অ–সার্বভৌম ইস্যুকারীরা ২০২২–এর জুন পর্যন্ত জিএসএস বন্ড হিসাবে প্রধানত হার্ড কারেন্সিতে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইস্যু করেছেন। এটি ২০১৫ সালে প্রথম গ্রিন বন্ড ইস্যু করার পর থেকে ভাল গতিতে এগিয়েছে, এবং তা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনা প্রতিফলিত করে৷ তবে এরপর বলা প্রয়োজন, এপিএসি অঞ্চলে ভারত কিন্তু চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের থেকে পিছিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে৷ খবর: ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক