তাসনুভা লিভিঃ স্বাধীনতা যুদ্ধের গণজাগরণ ও বৈপ্লবিক চেতনার স্পর্শে এক অপরিমেয় সম্ভাবনায় উজ্জীবিত হয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারলে, এই উজ্জীবনী শক্তি একাত্তরের রক্তস্নাত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতকে বহমান রাখবে।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানী স্বৈরশাসন-বিরোধী প্রতিটি আন্দোলনের অনিঃশেষ চেতনা আমাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও শিল্প সাহিত্যের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করেছে।
আমাদের জীবনে মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে মূল্যায়ন করা জরুরি; নয়তো স্মৃতি ও বিস্মৃতির দোলাচলে বাঙালি জাতিসত্তা বিভ্রান্তি ও সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে আস্তে আস্তে জাতীয় চেতনার পরাজয়ক্লিষ্টতার প্রকাশ ঘটাবে।
ইতিহাসের সেই রেনেসাঁসীয় গতি ও শক্তির পুনঃপর্যবেক্ষণ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। আমাদের যেন বলতে না হয়, “অতীত যেন বিদ্রুপ করছে বর্তমান হয়ে উঠেছে পান্ডুর, নির্ভর অযোগ্য।”
তাই আমার মতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও তার গভীরতা বুঝতে হবে, পদ্ধতিগত পরিবর্তনের সূচনা করতে হবে এবং এ চেতনা বিকশিত করতে হবে।
মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতির সৃজনশীল নিদর্শন, সামাজিক চেতনার উন্মেষ ও বিকাশের কার্যকর মাধ্যম ও জ্ঞান চর্চার উদ্দেশ্যমূলক প্রতিষ্ঠান হলো গ্রন্থাগার। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষাদান ও শিখন প্রক্রিয়ার সঙ্গে গ্রন্থাগার তথ্য-সম্পদ ব্যবহারের যোগসুত্র স্থাপনের বিষয়টি এখন পর্যন্ত যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। বর্তমানে গ্রন্থাগার ও তথ্য ব্যবহার নীতি অর্থে ব্যক্তিগত আগ্রহের উপর অনেকটা নির্ভরশীল।
গ্রন্থাগার পরিসেবা সমুন্নত রাখা ও ব্যবস্থাপনার গতিশীলতার লক্ষ্যে সামগ্রী রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ প্রতিটি গবেষণাগারের জন্য অপরিহার্য। আমাদের এখনকার গ্রন্থাগার গুলোর বর্তমান অবস্থা উন্নত বিশ্বের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। অথচ কোন দেশের উন্নয়ন ও গবেষণা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য উন্নতমানের দক্ষতাসম্পন্ন প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রন্থাগারগুলোতে অপরিহার্য।
আমাদের দেশের গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন ব্যবস্থা অনেকাংশেই দুর্বল। তাছাড়া গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনার নীতিগুলোরসঠিকভাবে প্রয়োগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই আমি মনে করি, পাঠকদের অতি দ্রুত সেবা প্রদান, গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা এবং প্রযুক্তির সুব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের উন্নয়ন করে এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
অতএব, আমি মনে করি আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে সকলকে একসাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গ্রন্থাগার সংরক্ষণের দ্বারা আমাদের দেশ ও জাতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে একসাথে কাজ করতে হবে।
লেখক: তাসনুভা লিভি, মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা, গ্রন্থাগার সংরক্ষণ ও প্রকাশনা সম্পাদক, সঞ্জীবন, ময়মনসিংহ জেলা শাখা