১০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হোম কোয়ারেন্টাইনে স্বাস্থ্য সচেতনতা

তানভীর সরকার টুটুল:  বর্তমানে কভিড-১৯ এর প্রভাবে সাধারণ জীবনযাপন যেমন বাধাগ্রস্ত,তেমনি আক্রান্তের পরিসংখ্যানও ঊর্ধ্বমুখী।  কভিড-১৯ মোকাবিলায় সবাইকে যেমন সচেতন থাকতে হবে তেমনি নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও সচেতন থাকা দরকার। এই করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা আজ গৃহবন্দী।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীদেরই সময় কাটছে ঘুম আর অনলাইনে। রাত্রে না ঘুমিয়ে সকালে ঘুমানোর প্রবণতা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকিস্বরূপ। অনলাইন ক্লাস,অনলাইন ট্রেনিং,অনলাইন কোর্স,মেসেঞ্জার, ফেসবুক ইত্যাদির মাধ্যমেই সময় ব্যয় হচ্ছে বেশি।অতিরিক্ত ঘুম যেমন শারীরিক বিপর্যয়ের কারণ,তেমনি অতিরিক্ত ইন্টারনেট আসক্তিও মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।এতে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়া স্বাভাবিক।প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোও ঠিক নয়।

এই কারনেই সাধারণ মানুষজন যারা বাসায় অবস্থান করছেন স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের।আর এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে তা হচ্ছে দৈহিক ওজন বৃদ্ধি।এই ওজন বৃদ্ধি দেহে যেমন কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তেমনি পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট, লিভার সমস্যা,ব্লাডপ্রেশার, স্ট্রোক সহ মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করে।

তাই এই অবস্থায় অনলাইনে অতিরিক্ত সময় না কাটিয়ে শারীরিক ব্যায়াম বা পরিশ্রম যেন নিয়মিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এজন্য দড়িলাফ হতে পারে উত্তম ব্যায়াম।বাসার ছাদে বা বাসার সামনে জায়গা থাকলে সহজেই দড়িলাফের অভ্যাসটি করা যেতে পারে। দড়িলাফ দেহের কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতিতে শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে।

এককালীন কিছু অর্থ খরচ করে সাইকেল কেনা যেতে পারে।সাইক্লিং যেমন উত্তম ব্যায়াম,তেমনি নিজের প্রয়োজনেও সাইকেল ব্যবহার করা যাবে।রিক্সা বা অটোরিকশা, ভ্যান,সিএনজি ইত্যাদি ছোট যানবাহনে যেসব জায়গায় যাতায়াত করা হয়, সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো এড়ানো সম্ভব হবে।অন্তত এসব ছোট যানবাহন থেকে করোনার ঝুঁকি এড়ানোও সম্ভব হবে।

বাসার ছাদে বা বাসার পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন ফলমূল,শাকসবজির বাগান করা যেতে পারে।এতে যেমন সময় কাটবে তেমনি শারীরিক পরিশ্রম ও হবে।নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা মনে প্রফুল্লতা আনে।এতে মানসিক প্রশান্তি আসে।তাছাড়া ছাদকৃষির মাধ্যমে অল্পপরিসরে হলেও যেমন পারিবারিক শাকসবজির যোগান দেওয়া সম্ভব হবে, তেমনি অর্থও  বাঁচবে।

যারা গ্রামে অবস্থান করছি কিন্তু সাঁতার পারিনা,তাদের জন্য সাঁতার শেখার উত্তম সময় এটি। সাঁতারের মাধ্যমে শরীর ফ্লেক্সিবল হবে। আর এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে খাবারদাবার এর উপর।  জাংকফুড জাতীয় খাবার একদম পরিহার করতে হবে। এতে উচ্চ পরিমাণে ক্যালরি,সোডিয়াম এবং লবণ থাকে যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।  সেইসাথে চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো অতি কম পরিমাণে খেতে হবে। এন্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার (ভিটামিন-এ, সি,ই,বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন) প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

গাজর,টমেটো,করলা(কোয়ারসেটিন,কোয়েমপফেরল),আম,কমলা,পেঁপে বেশি পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। সবুজ শাক বিশেষভাবে পালং শাক দেহের রক্তশূন্যতা দূর করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার মানসিক চাপ কমায়।তাই এক্ষেত্রে লেবুর বিকল্প নেই।

প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার যেমন টকদই গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যাগুলো দূর করতে পারে। বয়স্কদের খাবার দাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে। আবার বয়স্কদের কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার ঝুঁকিও বেশি। প্রয়োজনে তাদের জন্য খাবার নরম করে রান্না করা যেতে পারে। সেই সাথে ডিম, দুধ,কলা এই খাবারগুলো প্রতিদিন নিয়মমাফিক খাওয়াতে হবে। আর সবার ক্ষেত্রেই প্রচুর পরিমাণে পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। আর গ্রামাঞ্চলের মানুষজন যেন অপুষ্টির স্বীকার না হয় তার জন্য সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে।

এভাবে নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি নিজেদেরকেই সচেতন হতে হবে।নিজেদের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে কভিড-১৯ মোকাবিলা করাও সহজতর হবে।স্বাস্থ্যই সম্পদ।সুস্থ সবল জনসম্পদই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে।সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সুসাস্থ্যের কোনো বিকল্প নেই।

লেখকঃ তানভীর সরকার টুটুল, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ট্যাগ:

হোম কোয়ারেন্টাইনে স্বাস্থ্য সচেতনতা

প্রকাশ: ০৬:৫৩:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুন ২০২০

তানভীর সরকার টুটুল:  বর্তমানে কভিড-১৯ এর প্রভাবে সাধারণ জীবনযাপন যেমন বাধাগ্রস্ত,তেমনি আক্রান্তের পরিসংখ্যানও ঊর্ধ্বমুখী।  কভিড-১৯ মোকাবিলায় সবাইকে যেমন সচেতন থাকতে হবে তেমনি নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও সচেতন থাকা দরকার। এই করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ রয়েছে।লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা আজ গৃহবন্দী।

অধিকাংশ শিক্ষার্থীদেরই সময় কাটছে ঘুম আর অনলাইনে। রাত্রে না ঘুমিয়ে সকালে ঘুমানোর প্রবণতা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক হুমকিস্বরূপ। অনলাইন ক্লাস,অনলাইন ট্রেনিং,অনলাইন কোর্স,মেসেঞ্জার, ফেসবুক ইত্যাদির মাধ্যমেই সময় ব্যয় হচ্ছে বেশি।অতিরিক্ত ঘুম যেমন শারীরিক বিপর্যয়ের কারণ,তেমনি অতিরিক্ত ইন্টারনেট আসক্তিও মানসিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।এতে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়া স্বাভাবিক।প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোও ঠিক নয়।

এই কারনেই সাধারণ মানুষজন যারা বাসায় অবস্থান করছেন স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের।আর এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে তা হচ্ছে দৈহিক ওজন বৃদ্ধি।এই ওজন বৃদ্ধি দেহে যেমন কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় তেমনি পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট, লিভার সমস্যা,ব্লাডপ্রেশার, স্ট্রোক সহ মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করে।

তাই এই অবস্থায় অনলাইনে অতিরিক্ত সময় না কাটিয়ে শারীরিক ব্যায়াম বা পরিশ্রম যেন নিয়মিত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এজন্য দড়িলাফ হতে পারে উত্তম ব্যায়াম।বাসার ছাদে বা বাসার সামনে জায়গা থাকলে সহজেই দড়িলাফের অভ্যাসটি করা যেতে পারে। দড়িলাফ দেহের কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বিভিন্ন ঘরোয়া পদ্ধতিতে শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে।

এককালীন কিছু অর্থ খরচ করে সাইকেল কেনা যেতে পারে।সাইক্লিং যেমন উত্তম ব্যায়াম,তেমনি নিজের প্রয়োজনেও সাইকেল ব্যবহার করা যাবে।রিক্সা বা অটোরিকশা, ভ্যান,সিএনজি ইত্যাদি ছোট যানবাহনে যেসব জায়গায় যাতায়াত করা হয়, সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমে এগুলো এড়ানো সম্ভব হবে।অন্তত এসব ছোট যানবাহন থেকে করোনার ঝুঁকি এড়ানোও সম্ভব হবে।

বাসার ছাদে বা বাসার পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন ফলমূল,শাকসবজির বাগান করা যেতে পারে।এতে যেমন সময় কাটবে তেমনি শারীরিক পরিশ্রম ও হবে।নিয়মিত বাগানের পরিচর্যা মনে প্রফুল্লতা আনে।এতে মানসিক প্রশান্তি আসে।তাছাড়া ছাদকৃষির মাধ্যমে অল্পপরিসরে হলেও যেমন পারিবারিক শাকসবজির যোগান দেওয়া সম্ভব হবে, তেমনি অর্থও  বাঁচবে।

যারা গ্রামে অবস্থান করছি কিন্তু সাঁতার পারিনা,তাদের জন্য সাঁতার শেখার উত্তম সময় এটি। সাঁতারের মাধ্যমে শরীর ফ্লেক্সিবল হবে। আর এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতে হবে খাবারদাবার এর উপর।  জাংকফুড জাতীয় খাবার একদম পরিহার করতে হবে। এতে উচ্চ পরিমাণে ক্যালরি,সোডিয়াম এবং লবণ থাকে যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।  সেইসাথে চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো অতি কম পরিমাণে খেতে হবে। এন্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার (ভিটামিন-এ, সি,ই,বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন) প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

গাজর,টমেটো,করলা(কোয়ারসেটিন,কোয়েমপফেরল),আম,কমলা,পেঁপে বেশি পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। সবুজ শাক বিশেষভাবে পালং শাক দেহের রক্তশূন্যতা দূর করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার মানসিক চাপ কমায়।তাই এক্ষেত্রে লেবুর বিকল্প নেই।

প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার যেমন টকদই গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল সমস্যাগুলো দূর করতে পারে। বয়স্কদের খাবার দাবারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে। আবার বয়স্কদের কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হবার ঝুঁকিও বেশি। প্রয়োজনে তাদের জন্য খাবার নরম করে রান্না করা যেতে পারে। সেই সাথে ডিম, দুধ,কলা এই খাবারগুলো প্রতিদিন নিয়মমাফিক খাওয়াতে হবে। আর সবার ক্ষেত্রেই প্রচুর পরিমাণে পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। আর গ্রামাঞ্চলের মানুষজন যেন অপুষ্টির স্বীকার না হয় তার জন্য সরকারি সহায়তা বাড়াতে হবে।

এভাবে নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি নিজেদেরকেই সচেতন হতে হবে।নিজেদের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে কভিড-১৯ মোকাবিলা করাও সহজতর হবে।স্বাস্থ্যই সম্পদ।সুস্থ সবল জনসম্পদই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে।সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সুসাস্থ্যের কোনো বিকল্প নেই।

লেখকঃ তানভীর সরকার টুটুল, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়