গোবিন্দ মোদক: বর্তমান বিশ্বে আত্মহত্যার পরিমাণ দিন কে দিন বেড়েই চলছে। আত্মহত্যা বলতে কি বোঝায় তা আমরা প্রত্যেকেই বুঝি। কোনো ব্যক্তি তার নিজেকে নিজে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মাধ্যমে হত্যা করলে তা আমরা আত্মহত্যা বলি।
কিন্তু কেনও একজন ব্যক্তি তার নিজ অস্তিত্ব নিজের প্রাণ নিজেই হত্যা করে ফেলে। এ আত্নহত্যা সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞান ভালো ধারণা দিয়ে থাকে।সমাজবিজ্ঞান সমাজের প্রতিটি সমস্যার উদ্ভব, সমাধান,প্রতিকার এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
সমাজবিজ্ঞানের পিতা বলা হয় এলিম ডুরখেম কে।তিনি সমাজবিজ্ঞানের একজন প্রতিষ্ঠাতা।যাদের গবেষণায় সমাজবিজ্ঞান আজ প্রতিষ্ঠিত তাদের মাঝে একজন তিনি।তাঁর প্রতিটি লেখনিতে আত্মহত্যা সম্পর্কে লিখা আছে।
আত্মহত্যা সম্পর্কে এলিম ডুরখেম সমাজবিজ্ঞানের মাঝে ভালো ধারণা দিয়েছেন তারই প্রেক্ষাপটে আত্মহত্যার বেশ কিছু প্রকারভেদ রয়েছে।
এরমাঝে আত্নকেন্দ্রীক আত্মহত্যা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বা সংগঠিত হয়।সমাজে সংহতি কমে গেলে এ ধরনের আত্মহত্যা হয়।একাকিত্ব, হতাশা,নিঃসঙ্গতা,ব্যর্থতা প্রভৃতি থেকে মুক্তি পেতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
বর্তমান বিশ্বে যেসকল আত্মহত্যা দেখা যায় যার বেশির ভাগ আত্নকেন্দ্রীক হয়ে থাকে যায় প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে যার কারণ হিসেবে দায়ী সমাজ ব্যবস্থা, মানসিক সমস্যা,মানুষের মাঝে অতিরিক্ত ডিপ্রেশন।
মানুষ যখন অতিরিক্ত ডিপ্রেশন এ থাকে অন্য কোনো পথ খুঁজে পায় না নিজের আত্ন শান্তির জন্য তখন আত্মহত্যার মাধ্যমে তার সকল কিছু অবসান করতে চায়।
প্রায় ২৭% থেকে ৯০% মানুষের আত্মহত্যার পিছনে মানসিক রোগ থাকে যা এশিয়া মহাদেশের তুলনায়
পশ্চিমা দেশগুলো তে বেশি লক্ষ্যনিয়।
তবুও এক পরিসংখ্যানে মাধ্যমে জানা যায় ভারতে প্রতিবছর ১ লক্ষের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে।এত পরিমাণ আত্মহত্যা কারণ সামাজিক অসংগতি মানুষের অতিরিক্ত ডিপ্রেশন সামাজিক নানা ধরণের চাপ,পরিবার সহ আরও নানান কারণ উঠে আসে।
এগুলো তো গেল আত্মহত্যার কারণ,পরিসংখ্যান। কিন্তু বর্হিবিশ্বে যে আত্মহত্যার মত জঘন্য কাজ যা ধর্মের ভাষায় মহাপাপ সেই কাজই কেনো এত পরিমাণ বেড়ে চলছে তার থেকে সমাজের এমন আত্মহত্যা প্রবণ ব্যক্তিদের কিভাবে ফিরিয়ে আনা যায়।
হ্যারি হাটন এর মতে- প্রতিটি মানুষ জীবনে কখনও না কখনও একবার হলেও আত্মহত্যার কথা ভাবে।
হ্যাঁ এটা স্বাভাবিক নিয়ম মানুষ মানেই তার মাঝে কিছুটা ডিপ্রেশন,কোনো ধরণের চাপ একবার হলেও এসে থাকে জীবনে সেই সময়টায় কেউ কেউ অন্য কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে আত্মাহত্যার কথা ভাবে।
তবে সেই আত্মহত্যা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবা উচিত তার মৃত্যুর পর কি হবে,যে কারণে সে নিজেকে শেষ করতে চাচ্ছে সেই কারণটা কোনো না কোনো ভাবে অবশ্যই সমাধান করা সম্ভব।ভাবা উচিত যেকোনো সমস্যার সমাধান নিশ্চয়ই থাকে।
আত্মহত্যা কখনই কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না নিজের ইচ্ছায় কেনো মহাপাপ করে ফেলবো আত্মহত্যার পর সমাজের চোখে কেমন হয়ে থাকবো সবসময়।
আত্মহত্যা জীবনে সবচেয়ে বড় কাপুরুষতার পরিচয়-নেপোলিয়ান।
জীবনটা ছোট থেকে বড় হয় অনেক কষ্টে মাঝে, অনেক সময় ধরে চাইলেই তা এক মূহুর্তের মাঝে শেষ করে দেয়া যায় তবে তা জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। জীবনে অনেক বিপদ আসবে তা কাটিয়ে উঠে নতুন ভাবে জীবন গড়ে তুলাই প্রকৃত জীবন আর এ জীবনেই মিলে তৃপ্তি যা কখনও আত্নহত্যার মত নিকৃষ্ট কাজের মাধ্যমে শেষ করে দেয়া উচিত নয়।
সমাজের প্রত্যেক মানুষের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। কোনো ব্যক্তি কোনো কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চাইলে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে এনে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়ে দেয়া একজন প্রকৃত মানুষের কর্তব্য।
সর্বদা মনে রাখা উচিত আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না।
লেখক: গোবিন্দ মোদক, সভাপতি, ময়মনসিংহ জেলা, সঞ্জীবন এবং শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, আনন্দমোহন কলেজ।