তন্ময় : তোমাকে না বলছি অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলতে না..!
অর্ষা : ওরা আমার ফ্রেন্ড ৪-৫ বছর এক সাথে পড়েছি কথা না বললে কি হয় হা..??
তন্ময় : তুমি নিষেধ করার পর আমি তো কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনা…!! তুমি তোমার মেয়ে বন্ধুদের সাথে কথা বলো সমস্যা নেই….। কিন্তু ছেলে বন্ধুদের সাথে কোন কথা বলবে না, এটা আমি পছন্দ করি না, এটা আমি সহ্য করতে পারি না।
অর্ষা: তোমার পছন্দ অপছন্দে আমার কিছু যায় আসে না….। তুমি ছাড়াও আমার পার্সোনাল লাইফ আছে যা আমি এড়িয়ে চলতে পারবো না।
তন্ময় : কি….!!!…???? আমি ছাড়া তোমার অন্য পার্সোনাল লাইফ..!!! আমি তোমার স্বামী, আমার কি তোমাকে কিছু বলার, নিষেধ করার অধিকার নেই….???
অর্ষা: বেশী অধিকার ফেলাতে এসো না !!
তন্ময় : সরি, তোমাকে নিষেধ করা আমার ভুল হইছে, ক্ষমা চাই, ক্ষমা করে দিও আমায়। অর্ষার কথা শুনে তন্ময় খুব কষ্ট পেলো। তন্ময় কল্পনাও করেনি এমন কথা বলবে বা বলতে পারে অর্ষা। নিজের অজান্তেই কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে দু’চোয়াল শিক্ত হলো..। অর্ষাকে তন্ময় অনেক বেশী ভালবাসে।
অর্ষা : কি ব্যপার না ঘুমিয়ে অমন করে কি দেখছো……??? তন্ময় : আচ্ছা অর্ষা..!! ধরে নাও আমি নেই… আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে….???
অর্ষা: কেন কোথায় যাবে তুমি…..??
তন্ময় : এমনি ধরে নাও মানুষ এই আছে এই নাই, কখন কি হয় বলা তো যায় না…!! আমায় ছাড়া একা থাকতে পারবে…..??? অর্ষা: এসব কি বলছো…..?? ঘুমাও তো….
তন্ময় : আমার কথা কি মনে পড়বে….???
অর্ষা: না একটুও মনে পড়বে না।
তন্ময় : আমি তোমার যোগ্য নই তাই না…??
অর্ষা : আমার এসব একটুও ভালো লাগছে না…… ঘুমাও তো, আর একটা কথাও বলবে না। অর্ষা ও পাশে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। সকাল বেলা চোখ খুলতেই অর্ষা দেখতে পেলো তন্ময় ওর দিকে চেয়ে আছে, তন্ময় এর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে, পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে তন্ময় রাতে ঘুমায় নি।
অর্ষা : কি ব্যপার সারারাত ঘুমাও নি…???
তন্ময় : হুম, ঘুমাইছি তো… একটু আগেই উঠলাম।
অর্ষা : তুমি তো আমার আগে উঠো না আজ কেন..???
তন্ময়: না এমনিতেই…… তন্ময় কখনো অর্ষার সাথে মিথ্যা বলেনা সেটা যে বিষয়ই হোক না কেন। কিন্তু অর্ষা স্পষ্ট বুঝতে পারলো তন্ময় মিথ্যে বলছে…. তন্ময় সারারাত ঘুমায়নি। তন্ময় প্রতিদিন বের হবার সময় অর্ষার কপালে একটা চুমু খেয়ে বের হয়। আজ দুইবার চুমু খেলো, অন্য দিন হাসিখুশি যায়, আজ চুপচাপ নিস্তব্ধ, চোখে জল ছলছল করছে।
তন্ময় : যাই বাবু…. (কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলো)
অর্ষা: কি হলো কিছু ফেলে গেছো…..???
তন্ময় : না….বাবু তবে……. তন্ময় কিছু না বলে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরলো কপালে আবার চুমু খেলো আর বললো লক্ষী হয়ে থেকো বাবু। নিজেকে কনট্রোল করতে পারছে না তন্ময়…। আর কিছু না বলে তন্ময় চলে আসলো, চোখে জল…. অর্ষা ভাবছে তন্ময়ের কি হলো…..??? ও তো এমন না…..!! তন্ময়কে খুব ভাল করেই চিনে অর্ষা, প্রেম করে বিয়ে হয়েছে ওদের। তন্ময় অর্ষার চেয়ে পড়াশোনা কম করছে আবার চেহারার দিক দিয়েও অর্ষার চেয়ে তন্ময় একটু শ্যামলা। কিন্তু অর্ষা জানে তন্ময় ওকে নিজের চেয়েও বেশী ভালবাসে। তন্ময় অর্ষাকে অনেক বার বলেছে আমি কি তোমার যোগ্য…? উত্তরে অর্ষা বলেছে দেখো তন্ময়…!! ভালবাসা যোগ্যতা বা চেহারা দিয়ে হয় না, তুমি আর এসব কথা বলবে না। অর্ষা তন্ময়ের অনেক কথাই মানতে চাইতো না যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করতো। তন্ময় কিছু বলতো না, কোন বিষয় জোর করতো না, হার মেনে নিতো…। বিছানা ঠিক করতে যেয়ে অর্ষা একটা চিরকুট পেলো….। তন্ময়ের লিখা…….
বাবু তোমাকে ছাড়া থাকা কষ্টের। তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখা বা কথা বলা আরো অনেক অনেক বেশী কষ্টের যা আমি সহ্য করে নিতে পারছি না। আমি চেষ্টা করেছি তোমাকে ফিরাতে কিন্তু আমি ব্যর্থ। হয়তো এখন আমার কোন মূল্য নেই তোমার কাছে…… যেখানে আমি তোমার স্বামী হয়ে কোন মূল্য পেলাম না তাই চলে যাচ্ছি অনেক দূরে ………… আজ থেকে তুমি স্বাধীন, মুক্তো করে দিলাম তোমায়। বাবু ‘ আমার কথা মনে পড়লে আকাশের তারাঁর দিকে তাকাবে…… সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরা টাই আমি, দূর থেকে তোমায় দেখবো, কথা বলবো আমার বাবুটার সাথে। লক্ষী হয়ে থেকো, ভালো থেকো” সাথে সাথে তন্ময়কে মোবাইলে কল দিলো অর্ষা কিন্তু মোবাইল বন্ধ পেলো। কি করবে বুঝতে পারছে না অর্ষা। তন্ময় অন্য ছেলেদের তুলনায় খুব বেশী ইমোশনাল। অর্ষা ফ্যামিলির সবার কাছে কল দিলো। সবাই তন্ময়ের নাম্বার বন্ধ পাচ্ছে….!!
অর্ষা অঝোর ধারায় কাঁদছে এদিকে সবাই তন্ময়কে খুঁজতে খুঁজতে পেরেশান হয়ে যাচ্ছে কোথাও তন্ময়কে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় ৪-৫ ঘন্টা পর খবর এলো তন্ময়ের লাশ হাসপাতালে……!!! রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে তন্ময়। অর্ষা পাথর হয়ে গেল, অর্ষার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো, অর্ষা জানে এটা এক্সিডেন্ট না…..। তন্ময় আত্যহত্যা করছে। আর এ জন্য দায়ী অর্ষা নিজেই…….। অর্ষা কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না, অর্ষা নিজের ভুল বুঝতে পারছে, হাউ মাউ করে কাঁদছে…, সামান্য কিছু ভুলের জন্য সে আজ তার ভালোবাসার মানুষকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললো..। অর্ষা হাজার চাইলেও আর তন্ময়কে ফিরিয়ে আনতে পারবে না…। অর্ষা এখন রাত হলেই ছাদে গিয়ে বসে থাকে তন্ময়ের সাথে কথা বলার জন্য। ছাদে গিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল তাঁরাটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর কথা বলে…..
“বাবু কেমন আছো তুমি আমাকে ছেড়ে”…?? বাবু আমি এখন কারো সাথে কথা বলি না। বিশ্বাস করো, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও, শুধু তোমার সাথে বলি এখন আমি শুধু তোমার বাবু। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি বাবু তাই না….?? বাবু আমি বুঝতে পারি নাই আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি খুব পচা, খুব খারাপ তাই না বাবু…..?? কি বললে.?? আমার বাবু টা পচা না খারাপ না…..??? হুম আমি খারাপ আমার ভুলের জন্য তোমাকে আজ হারিয়ে আমি এখন একা।
লেখকঃ তন্ময়, শিক্ষার্থী, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, ময়মনসিংহ।