০৩:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রবাসে ঈদ! কেমন আছেন প্রবাসী যোদ্ধারা?

মোফাসসিরুল হক তন্ময়: পরিবারের মুখে হাঁসি ফুটাতে, পরিবারের একটু সুখের আশায়, পরিবারের মায়া কাটিয়ে, মাতৃভূমির মায়া কাটিয়ে, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যারা রাখে, তারা হলো প্রবাসী! জীবনে তাদের সুখকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারকে সুখে রাখতে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি ।

আজ আমরা হয়তো তাদের দেওয়া টাকায় খুব সুন্দরভাবে প্রতি বছর ঈদ করি, কোন সময় জিজ্ঞেস করি কি তারা কিভাবে ঈদ করে!  প্রতি ঈদে তারা দূর থেকে চোখের পানি ফেলে, মা বাবা ভাই বোন পরিবার পরিজন রেখে একা ঈদ করা কতটা কষ্টের! প্রতি বছর ন্যায় এই ঈদের সময় অনেকে আশা ছিলো তাদের সন্তানেরা নতুন পোশাক গাইয়ে পরে আনন্দ করবে কিন্তু আজ প্রায় তিন মাস যাবৎ পৃথিবীর বুকে করোনা নামক ভাইরাসে সবার রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে তারা যে গৃহবন্দী ও অসহায়, কতটা কষ্টে তারা আছে আমরা একবার কি জানতে চেয়েছি! জীবন আমাদের সুখের আশায় যেই পিতা নিজের সুখ কে বিষর্জন দিয়ে এতো কষ্ট করে কোন দিন ভেবে দেখেছি আমার আপনার বাবা চাচা রা কতোটা কষ্ট করে প্রবাসে পরে আছে! মাথার রক্ত পায়ে ফেলে যারা আমাদের টাকা দেই তাদের টাকায় মজবুত হয় দেশের অর্থনীতি, কোটি প্রবাসী রক্তের ঋণ আমরা সুদ কোন সময় করতে পারবো না! তারাও তো দেশের উন্নয়নে এক বড় অংশীদার।
আজ করোনা ভাইরাস এর কারণে পৃথিবীর নানা দেশে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬০০ জনের বেশী বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছে, অসংখ্য মানুষ হাসপাতালে ভর্তি, তারাও তাদের পরিবার কেমন আছে আমরা কি জানতে চাই!  আমাদের মনে হয়, আমাদের যারা বিদেশে থাকে তারা খুবই সুখী, মাসের মাস হাজার হাজার টাকা তারা দেয়, কিন্তু এর পিছনে যে কতটা রক্ত ও ঘাম তার মূল্য আমরা দিতে শিখি নি!
আজ আমি বলতে চাই, আমার বাবা নিজেও সৌদি প্রবাসী। বাবা আমাকে কল দিয়ে কথা বলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। বাবার কথা বলার সময় বাবার চোখের অশ্রু আমাকে বারবার উদ্বেলিত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বাবাকে বলি, বাবা কান্না করো না!
বাবা এই জন্যই কান্না করছে কারণ তাঁর আশেপাশে অনেক বাংলাদেশী না খেয়ে রোজা রাখছে !বাড়িতে টাকা দিতে পারে না! ছেলে মেয়েরা কি ভাবে ঈদ করবে, সেই চিন্তায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা বুক ভাসিয়ে কান্না করে।
জীবনে অনেক সময় আসবে, এমন পরিস্থতি হয় তো থাকবে না! কিন্তু আজ প্রবাসীরা কতোটা অসহায়, তা নিজের চোখে দিখতে পারলে আপনি আপনার কলিজা বের করে দিয়ে দিবেন!  কারণ তাদের এমন অবস্থা, পারে না রুম থেকে বের হতে, পারে না কারো কাছে খাবার চাইতে!
আমার বাবা আশেপাশে যারা আছে তাদের পাশে নিজের সাধ্যমত দাঁড়িয়েছে, কিন্তু এখন মক্কার পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় আমার বাবা পবিত্র মক্কা শরিফ ছেড়ে জেদ্দা যাইতে বাধ্য হেয়েছে! পাঁচ বছর পর মক্কার মায়া ছেড়ে জেদ্দা যখন রওনায় হয় মক্কার শরীফ ছেড়ে যাওয়ার কষ্টে কান্নার রুল পড়ে যায় বাবার চোখে! যা আমি ভিডিও কলে দেখেছি!
আজ অসহায় হয়ে অনেক পরিবার না খেয়ে আছে! মধ্যবিত্ত হওয়ায় কারো কাছে হাত পাততে পারছে না! জানি তাদের কষ্টের প্রতিদান আমরা দিতে পারবো না। কিন্তু মনটা ভরে তাদের জন্য দোয়া করি তারা সকল পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেন আবার দেশের অর্থনীতির উন্নয়নেে ভূমিকা রেখে পরিবার পরিজন ও দেশ নিয়ে সুখে থাকতে পারে। জীবন বেশী দিনের নয়! প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের! প্রতিটি ঈদে তারা কান্না করে বুক ভাসায় আমাদের না পাওয়ায়! অনেক পরিবার ঈদের বাজার করতে পারে না কতো কষ্টে আছে তারা! আমরা সহানুভূতি হয়ে সবাই সবার পাশে দাঁড়ায়, প্রবাসীরা এই দেশের সম্পদ।

সবশেষ, সরকারের কাছে বলবো যারা এই ভাইরাস ও বিভিন্ন কারণে মৃত্যু বরণ করেছে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহয়তা যেন করা হয়।

আল্লাহ সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের হেফাজতে রাখুক! পৃথিবীর সকল মানুষের মাঝে শান্তি ফিরে আসুক! আর এটাই চাওয়া আমাদের প্রবাসী যারা আছে তারা আবার আমাদের সাথে একত্রে ঈদ করবে ও বাবার বুকে মাথা রাখতে পারবে, এটাই যেন সব সন্তানের ভাগ্যে হয়! এই দিন এক সময় থাকবে না, সুদিন ফিরবেই, ইনশাআল্লাহ।
লেখকঃ তন্ময়, শিক্ষার্থী, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ  ও সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক,  সঞ্জীবন, ত্রিশাল উপজেলা  শাখা।
ট্যাগ:

প্রবাসে ঈদ! কেমন আছেন প্রবাসী যোদ্ধারা?

প্রকাশ: ০৯:৪৮:১৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ মে ২০২০

মোফাসসিরুল হক তন্ময়: পরিবারের মুখে হাঁসি ফুটাতে, পরিবারের একটু সুখের আশায়, পরিবারের মায়া কাটিয়ে, মাতৃভূমির মায়া কাটিয়ে, দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা যারা রাখে, তারা হলো প্রবাসী! জীবনে তাদের সুখকে বিসর্জন দিয়ে পরিবারকে সুখে রাখতে পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি ।

আজ আমরা হয়তো তাদের দেওয়া টাকায় খুব সুন্দরভাবে প্রতি বছর ঈদ করি, কোন সময় জিজ্ঞেস করি কি তারা কিভাবে ঈদ করে!  প্রতি ঈদে তারা দূর থেকে চোখের পানি ফেলে, মা বাবা ভাই বোন পরিবার পরিজন রেখে একা ঈদ করা কতটা কষ্টের! প্রতি বছর ন্যায় এই ঈদের সময় অনেকে আশা ছিলো তাদের সন্তানেরা নতুন পোশাক গাইয়ে পরে আনন্দ করবে কিন্তু আজ প্রায় তিন মাস যাবৎ পৃথিবীর বুকে করোনা নামক ভাইরাসে সবার রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে তারা যে গৃহবন্দী ও অসহায়, কতটা কষ্টে তারা আছে আমরা একবার কি জানতে চেয়েছি! জীবন আমাদের সুখের আশায় যেই পিতা নিজের সুখ কে বিষর্জন দিয়ে এতো কষ্ট করে কোন দিন ভেবে দেখেছি আমার আপনার বাবা চাচা রা কতোটা কষ্ট করে প্রবাসে পরে আছে! মাথার রক্ত পায়ে ফেলে যারা আমাদের টাকা দেই তাদের টাকায় মজবুত হয় দেশের অর্থনীতি, কোটি প্রবাসী রক্তের ঋণ আমরা সুদ কোন সময় করতে পারবো না! তারাও তো দেশের উন্নয়নে এক বড় অংশীদার।
আজ করোনা ভাইরাস এর কারণে পৃথিবীর নানা দেশে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৬০০ জনের বেশী বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছে, অসংখ্য মানুষ হাসপাতালে ভর্তি, তারাও তাদের পরিবার কেমন আছে আমরা কি জানতে চাই!  আমাদের মনে হয়, আমাদের যারা বিদেশে থাকে তারা খুবই সুখী, মাসের মাস হাজার হাজার টাকা তারা দেয়, কিন্তু এর পিছনে যে কতটা রক্ত ও ঘাম তার মূল্য আমরা দিতে শিখি নি!
আজ আমি বলতে চাই, আমার বাবা নিজেও সৌদি প্রবাসী। বাবা আমাকে কল দিয়ে কথা বলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। বাবার কথা বলার সময় বাবার চোখের অশ্রু আমাকে বারবার উদ্বেলিত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বাবাকে বলি, বাবা কান্না করো না!
বাবা এই জন্যই কান্না করছে কারণ তাঁর আশেপাশে অনেক বাংলাদেশী না খেয়ে রোজা রাখছে !বাড়িতে টাকা দিতে পারে না! ছেলে মেয়েরা কি ভাবে ঈদ করবে, সেই চিন্তায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা বুক ভাসিয়ে কান্না করে।
জীবনে অনেক সময় আসবে, এমন পরিস্থতি হয় তো থাকবে না! কিন্তু আজ প্রবাসীরা কতোটা অসহায়, তা নিজের চোখে দিখতে পারলে আপনি আপনার কলিজা বের করে দিয়ে দিবেন!  কারণ তাদের এমন অবস্থা, পারে না রুম থেকে বের হতে, পারে না কারো কাছে খাবার চাইতে!
আমার বাবা আশেপাশে যারা আছে তাদের পাশে নিজের সাধ্যমত দাঁড়িয়েছে, কিন্তু এখন মক্কার পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় আমার বাবা পবিত্র মক্কা শরিফ ছেড়ে জেদ্দা যাইতে বাধ্য হেয়েছে! পাঁচ বছর পর মক্কার মায়া ছেড়ে জেদ্দা যখন রওনায় হয় মক্কার শরীফ ছেড়ে যাওয়ার কষ্টে কান্নার রুল পড়ে যায় বাবার চোখে! যা আমি ভিডিও কলে দেখেছি!
আজ অসহায় হয়ে অনেক পরিবার না খেয়ে আছে! মধ্যবিত্ত হওয়ায় কারো কাছে হাত পাততে পারছে না! জানি তাদের কষ্টের প্রতিদান আমরা দিতে পারবো না। কিন্তু মনটা ভরে তাদের জন্য দোয়া করি তারা সকল পরিস্থিতি মোকাবিলায় যেন আবার দেশের অর্থনীতির উন্নয়নেে ভূমিকা রেখে পরিবার পরিজন ও দেশ নিয়ে সুখে থাকতে পারে। জীবন বেশী দিনের নয়! প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের! প্রতিটি ঈদে তারা কান্না করে বুক ভাসায় আমাদের না পাওয়ায়! অনেক পরিবার ঈদের বাজার করতে পারে না কতো কষ্টে আছে তারা! আমরা সহানুভূতি হয়ে সবাই সবার পাশে দাঁড়ায়, প্রবাসীরা এই দেশের সম্পদ।

সবশেষ, সরকারের কাছে বলবো যারা এই ভাইরাস ও বিভিন্ন কারণে মৃত্যু বরণ করেছে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহয়তা যেন করা হয়।

আল্লাহ সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের হেফাজতে রাখুক! পৃথিবীর সকল মানুষের মাঝে শান্তি ফিরে আসুক! আর এটাই চাওয়া আমাদের প্রবাসী যারা আছে তারা আবার আমাদের সাথে একত্রে ঈদ করবে ও বাবার বুকে মাথা রাখতে পারবে, এটাই যেন সব সন্তানের ভাগ্যে হয়! এই দিন এক সময় থাকবে না, সুদিন ফিরবেই, ইনশাআল্লাহ।
লেখকঃ তন্ময়, শিক্ষার্থী, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ  ও সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক,  সঞ্জীবন, ত্রিশাল উপজেলা  শাখা।

Fatal error: Uncaught wfWAFStorageFileException: Unable to save temporary file for atomic writing. in /home/nabajugc/public_html/wp-content/plugins/wordfence/vendor/wordfence/wf-waf/src/lib/storage/file.php:34 Stack trace: #0 /home/nabajugc/public_html/wp-content/plugins/wordfence/vendor/wordfence/wf-waf/src/lib/storage/file.php(658): wfWAFStorageFile::atomicFilePutContents('/home/nabajugc/...', '<?php exit('Acc...') #1 [internal function]: wfWAFStorageFile->saveConfig('livewaf') #2 {main} thrown in /home/nabajugc/public_html/wp-content/plugins/wordfence/vendor/wordfence/wf-waf/src/lib/storage/file.php on line 34