লায়লাতুন নাহার সিমি: যুগে যুগে কালজয়ী লেখকগণ তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে আমাদের জীবনের লক্ষ্য স্থির করণে বিরাট ভূমিকা রেখেছেন। পাওলো কোয়েলহো রচিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বেস্টসেলার বই “দ্যা আলকেমিস্ট” সেই তালিকারই অন্যতম। বইটি আপনাকে আপনার লক্ষ্যের দিকে অবিচল ভঙ্গিমায় এগিয়ে যেতে প্রণোদনা জোগাবে নিঃসন্দেহে। সহজ-সাবলীল অত্যন্ত জনপ্রিয় রূপকধর্মী এই বইটির পুরো দৃশ্যপট সান্তিয়াগো নামের এক তরুন স্বপ্নবাজ মেষপালককে ঘিরে। বইটির আজ অবধি লাখ লাখ কপি সমগ্র বিশ্বে বিক্রি হয়েছে এবং নিঃসন্দেহে বইটির লাখো কোটি ভক্ত রয়েছে। তাই আমি নগণ্য পাঠক আজ আমার লিখনীতে বইটিকে রেটিং করার দিকে মনযোগী না হয়ে বরং যারা এখনও বইটি পড়েননি, তাঁদেরকে একটু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
মিশরের পিরামিডে গুপ্তধন রয়েছে, এরকম একটি স্বপ্ন দেখে সান্তিয়াগো অস্থির দিনাতিপাত করছিলো! হঠাত সে পেয়ে গেলো এমন একজনকে, যে কিনা স্বপ্ন ব্যাখ্যা করতে জানে। স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে সান্তিয়াগো সিদ্ধান্ত নিলো তাঁর মেষ পাল বিক্রি করে ছুটবে পিরামিডের দেশে। ভাবনা অনুযায়ী যাত্রাও শুরু করলো সে। কিন্তু বিধিবাম! পথিমধ্যে মেষপাল বিক্রিকৃত প্রাপ্ত সব টাকা-পয়সা চুরি হয়ে গেলো তাঁর।
যাত্রাপথেই এক রাজার সাথে দেখা হল সান্তিয়াগোর। ঘটনার সূত্র মেনে সেখানে বসবাসের জায়গাও হলো তাঁর। এবারে কাচের শো-পিচ বিক্রি করে আবারও টাকা উপার্জন শুরু করলো সে। কিন্তু হঠাত করেই আগের সেই গুপ্তধনের স্বপ্নটা পুনরায় দেখায়, আবারও সবকিছু ছেড়ে মরুভূমির উদ্দ্যেশে যাত্রা শুরু করলো সে।
যাত্রা পথে এক মরুদ্যানে, যা কিনা বস্তুত একটি যুদ্ধক্ষেত্র, সেখানে বিশেষ এক সম্প্রদায়ের এক সুন্দরীর প্রেমে পড়লো সে। সে মরুদ্যানেই বিশেষ এক যুদ্ধ সংকেতের সুচতুর ব্যাখ্যা করে ঐ সম্প্রদায়কে বড় যুদ্ধ থেকে বাঁচিয়ে দিলো সান্তিয়াগো। ফলশ্রুতিতে সবাই খুশি হয়ে তাকে প্রচুর সম্পদ, এমনকি ঐ রূপসীর সাথে বিয়েও দিয়ে দিলো।
সে ভেবেছিলো এবার সবকিছু ছেড়ে, সে সুখী জীবন যাপন আরম্ভ করবে। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন তাঁর পিছু ছাড়লো না। সে পুনরায় একই গুপ্তধনের স্বপ্ন দেখলো। ব্যাপারটা এমন দাড়ালো যে, সান্তিয়াগো বারবার সব ছেড়ে গুপ্তধনের পেছনে যায় এবং কিন্তু প্রতিবারই কোথাও না কোথাও আটকে যায়! আবার এভাবেও বলা যায় ব্যাপারটাকে যে সান্তিয়াগো প্রতিবার থিতু হবার চেষ্টা করে ঠিকই কিন্তু গুপ্তধনের লালসা তাঁকে ছাড়েনা!
এইবার সে দেখা পায় আলকেমিস্ট এর, যিনি কী না এই গল্পের মাস্টার! আলকেমিস্ট এমন একটা জিনিস প্রদর্শন করেন, যা সব জিনিসকে সোনা বানিয়ে দেয়।
সান্তিয়াগো এক পর্যায়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলো, “তাহলে আপনি সব জিনিসকে সোনা বানিয়ে দিচ্ছেন না কেনো?”
তখন আলকেমিস্ট উত্তর করলেন, “আমি যদি সব জিনিসকে সোনা বানিয়ে দিই, তাহলে সোনার আর মূল্য থাকবে না!” এইখানে একটা জিনিস বুঝতে হবে যে, সোনার কাজ সোনা করবে আর লোহার কাজ লোহা করবে।
এভাবেই পথ চলতে চলতে একসময় সান্তিয়াগো তার গুপ্তধন খুঁজে পেলো। কিন্তু পিরামিড দেখার ছলে সে আবার সবকিছু হারিয়ে ফেললো। সে আবার আগের জায়গায় ফিরে যায় এবং গল্পটা এইভাবেই শেষ হয়। মাঝখানের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতাটুকু নেবার জন্য এই নিবন্ধের পাঠককে অবশ্যই গল্পটি পড়তে হবে।
এখানে উল্লেখ্য, শুধুমাত্র রূপক অর্থেই গুপ্তধন ব্যবহার হয়েছে। পিরামিড দেখার ছলে যে সে নানান ঘটনার সাক্ষী হলো, অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যুক্ত করলো কতশত রঙিন পালক, যা তাঁকে পরিপূর্ণ একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তুললো, সেটাই এখানে মূল প্রতিপাদ্য! আলকেমিস্ট সবটুকু পড়লে খুব সহজেই এর অন্তর্নিহিত একটি বার্তা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়, তা হচ্ছে, “আপনি শুধু নিজের স্বপ্নের পেছনে দৌড়াবেন, ব্যাপারটা এমন না! স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন, সেটাই আসলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়!”
“দ্য অ্যালকেমিস্ট ‘বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লাইন যা আমার ভালো লেগেছে:
** You will never be able to escape from your heart so it’s better to listen to what it has to say
** When you want something, all the universe conspires in helping you to achieve it.
সর্বোপরি পাঠকদের উদ্দেশ্য এটাই বলবো, জীবনে সবচেয়ে বেশি দামী সম্পদ অভিজ্ঞতা। আমাদের জীবনে নানা বন্ধুর পথ অতিক্রম করেই আমাদেরকে এগোতে হয়। দ্যা আলকেমিস্ট বইটি পড়লে এটুকু অন্তত বলতে পারি, পাঠক নতুন করে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা অবশ্যই পাবেন!
লেখক: লায়লাতুন নাহার সিমি, শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন,