Dhaka 10:25 am, Saturday, 2 December 2023

  • Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/page/header_design_two.php on line 68

“নির্বাসন” আমাদের অনিশ্চিত জীবনেরই গল্প

  • Reporter Name
  • Update Time : 02:08:02 pm, Thursday, 2 April 2020
  • 22 Time View

হোমায়রা তাসনিম: জীবন এক অদ্ভুত খেয়ালি ঘুড়ির নাম। সে কখনো উড়ে যেতে যেতে সুতোর টানে থমকে দাঁড়ায়, ফিরে আসে নাটাইয়ের কাছে। আবার কখনো সুতো ছিঁড়ে উড়ে যায় অসীম আকাশে। “নির্বাসন” বইটি যেনো জীবনেরই আরেক নাম। লেখক তার “নির্বাসন”উপন্যাসে মানুষের অনিশ্চিত জীবন নিয়ে আলোচনা করেছেন। উপন্যাসটির শেষের কাহিনী পাঠকের মনে একধরনের অতৃপ্তির ঝড় তুলবে। মনে হবে, “শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।”এখন উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় আসা যাক। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মনসুর, কণা এবং জোহরা। এছাড়াও কিছু অপ্রধান চরিত্র রয়েছে, যা উপন্যাসটিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এক কথায় বলতে গেলে, ‘নির্বাসন’ উপন্যাসটিতে সাদাত হোসাইন যেনো এক অদ্ভূত মায়ার খেলা দেখিয়েছেন।

সুবর্ণপুর বিল ছাড়িয়ে জঙ্গল। তারও ওপারে লস্কর ডাকাতদের চর। চরের প্রধান হচ্ছে তোরাব আলী, যার মেঝো ছেলে ফয়জুল সাত বছর আগে ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পরে আর ফেরত আসেনি। ফয়জুলের কিশোরী মেয়ে জোহরাকে নিয়ে দাদা তোরাব আলী অন্য জীবনের স্বপ্ন দেখেন। তিনি চাননা, মায়াবী চেহারার মেয়েটার জীবন লস্কর চরে কোনো লস্করের সাথে কাটুক। তিনি দূরে কোথাও নাতনিকে বিয়ে দিতে চান।

গল্পের অন্য পাশে, নবীগঞ্জ গ্রামের আজহার খন্দকারের মেডিকেল পড়ুয়া বড় ছেলে মনসুরের সাথে গোবিন্দপুরের স্কুল শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে ক্ণার পরিচয় এবং প্রণয় সমাপ্ত। খুব বেশিই ভালোবাসাময় ছিলো পুরো উপন্যাস জুড়ে কণা-মনসুরের গল্পটি। সম্পর্কের শুরুতে মনসুরের নিশ্চিত হতে চাওয়ার বিষয়টি যে কণা তার মনের নিছক কল্পনা নাকি সত্যিকারের চাওয়া, যদি মিথ্যে কল্পনা হয় তাহলে সে বিহীন তার পৃথিবীটা কী ভীষণ জঘন্য হবে, এই ভাবনাটা লেখকের মনের চমৎকার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছে।

ঘটনা এগিয়ে যাওয়ার সূত্র ধরে পরবর্তী মুহুর্তেই, জোহরার স্নিগ্ধ জল থেকে প্রলয়ঙ্করী হয়ে উঠা, অর্থাৎ লস্কর দলের সাথে সরাসরি কাজ করা! খুন-খারাবিতে লিপ্ত হওয়া! মনসুরের গুম হয়ে যাওয়া! মনসুর-কণার সন্তান মন এর জন্ম! গল্পের মোড় কোন দিকে ঘুরাবে তা পাঠক শুরুতে চিন্তাও করতে পারবেন না।

পুরো উপন্যাস জুড়েই স্পর্শকাতর দুইটা বিষয় হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

**মেয়েসন্তানদের প্রতি বাবাদের ভালোবাসা কত তীব্র হয় তার অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে কণার বাবা ও তার শশুড়ের চরিত্রে।
**মনসুর-কণার মধ্যে গড়ে ওঠা আত্মার বন্ধন। কনার প্রতি মনসুরের ভালোবাসা এতই দৃঢ় ছিলো যে, জোহরার দুর্ধর্ষ আর নির্দয় ডাকাতি করার ক্ষমতাও মনসুরের মন থেকে কনাকে মুছে দিতে পারেনি। অনিচ্ছায় নির্বাসন জীবনে কনার মুখটাই মনসুরকে অপেক্ষায় বাঁচিয়ে রেখেছে। নির্বাসিত জীবন মনসুর কেমন কাটিয়েছে তা জানতে পাঠককে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। তবে উপন্যাসটি পড়ে শেষে মনে হবে অসমাপ্ত!!

উপন্যাসটির কিছু দূর্দান্ত লাইন…

১. “মানুষের গভীরতম প্রার্থণা হয় একাকী, নীরবে, গোপনে।”
২. “চইলা যাওন যত সহজ, ফিরা আহন তত সহজ নারে।”
৩. “জগতের অনিশ্চিত অপেক্ষার চেয়ে ভয়ংকর কিছু নেই।”
৪. “জগতের নিসঙ্গ মানুষের কান্নার মতো এমন গভীর আর কিছু নেই।”
৫. “জীবন শেষ পর্যন্ত আক্ষেপেরই নাম। যেমনই হোক, আমাদের আক্ষেপ থেকেই যায়।”
৬. “জীবন কি আশ্চর্যরকম অনিশ্চিত, অনির্দেশ্য।­ আর মানুষ সেখানে কি ভীষণ অসহায়! এখানে নাটকের লিখে রাখা পাণ্ডুলিপিও মঞ্চস্থ হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে হুট করে বদলে যায়। হয়ে যায় অচেনা অন্য কোনো গল্প। সেই গল্পে মানিয়ে নিতে হয় কুশীলবদের। কিন্তু,মানিয়ে নেওয়া বড় কষ্টের।”
৭. “মায়া এমন এক জিনিস,যা মানুষকে অন্ধ করে দেয়, হিতাহিত জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পাইয়ে দেয়।মায়ার প্রভাব ভালোবাসার চেয়েও বেশি।”

সর্বোপরি বলা যায় লেখকের নামকরণটি বেশ সুন্দর হয়েছে এবং একই সঙ্গে উপন্যাসের ভাষাও বেশ সাবলীল এবং প্রাণবন্ত। পাঠক যখন পাঠ করবেন, চোখের সামনেই সবটা কল্পনা করতে পারবেন এতোই সুন্দর এবং সাবলীল, সহজভাবে সবকিছু বর্ণনা করা হয়েছে। বইটি অনেক আগেই বেরিয়েছে বাজারে, যারা এখনও পড়েননি, তাঁদের জন্য নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের সেরা লেখকদের একজনের এই বইটি আকর্ষণীয় হতে পারে।

বইটি সম্পর্কে কিছু তথ্যাদি: 

নামঃ নির্বাসন
প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা_২০১৯
পৃষ্ঠাঃ ৩৭৬
মূল্যঃ ৫৯০/-

 

লেখক: হোমায়রা তাসনিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ২য় বর্ষ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।

Tag :

Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/common/single_two.php on line 177

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

Notice: Undefined index: footer_custom_code in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/footer.php on line 87

“নির্বাসন” আমাদের অনিশ্চিত জীবনেরই গল্প

Update Time : 02:08:02 pm, Thursday, 2 April 2020

হোমায়রা তাসনিম: জীবন এক অদ্ভুত খেয়ালি ঘুড়ির নাম। সে কখনো উড়ে যেতে যেতে সুতোর টানে থমকে দাঁড়ায়, ফিরে আসে নাটাইয়ের কাছে। আবার কখনো সুতো ছিঁড়ে উড়ে যায় অসীম আকাশে। “নির্বাসন” বইটি যেনো জীবনেরই আরেক নাম। লেখক তার “নির্বাসন”উপন্যাসে মানুষের অনিশ্চিত জীবন নিয়ে আলোচনা করেছেন। উপন্যাসটির শেষের কাহিনী পাঠকের মনে একধরনের অতৃপ্তির ঝড় তুলবে। মনে হবে, “শেষ হইয়াও হইলো না শেষ।”এখন উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় আসা যাক। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মনসুর, কণা এবং জোহরা। এছাড়াও কিছু অপ্রধান চরিত্র রয়েছে, যা উপন্যাসটিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এক কথায় বলতে গেলে, ‘নির্বাসন’ উপন্যাসটিতে সাদাত হোসাইন যেনো এক অদ্ভূত মায়ার খেলা দেখিয়েছেন।

সুবর্ণপুর বিল ছাড়িয়ে জঙ্গল। তারও ওপারে লস্কর ডাকাতদের চর। চরের প্রধান হচ্ছে তোরাব আলী, যার মেঝো ছেলে ফয়জুল সাত বছর আগে ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পরে আর ফেরত আসেনি। ফয়জুলের কিশোরী মেয়ে জোহরাকে নিয়ে দাদা তোরাব আলী অন্য জীবনের স্বপ্ন দেখেন। তিনি চাননা, মায়াবী চেহারার মেয়েটার জীবন লস্কর চরে কোনো লস্করের সাথে কাটুক। তিনি দূরে কোথাও নাতনিকে বিয়ে দিতে চান।

গল্পের অন্য পাশে, নবীগঞ্জ গ্রামের আজহার খন্দকারের মেডিকেল পড়ুয়া বড় ছেলে মনসুরের সাথে গোবিন্দপুরের স্কুল শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে ক্ণার পরিচয় এবং প্রণয় সমাপ্ত। খুব বেশিই ভালোবাসাময় ছিলো পুরো উপন্যাস জুড়ে কণা-মনসুরের গল্পটি। সম্পর্কের শুরুতে মনসুরের নিশ্চিত হতে চাওয়ার বিষয়টি যে কণা তার মনের নিছক কল্পনা নাকি সত্যিকারের চাওয়া, যদি মিথ্যে কল্পনা হয় তাহলে সে বিহীন তার পৃথিবীটা কী ভীষণ জঘন্য হবে, এই ভাবনাটা লেখকের মনের চমৎকার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছে।

ঘটনা এগিয়ে যাওয়ার সূত্র ধরে পরবর্তী মুহুর্তেই, জোহরার স্নিগ্ধ জল থেকে প্রলয়ঙ্করী হয়ে উঠা, অর্থাৎ লস্কর দলের সাথে সরাসরি কাজ করা! খুন-খারাবিতে লিপ্ত হওয়া! মনসুরের গুম হয়ে যাওয়া! মনসুর-কণার সন্তান মন এর জন্ম! গল্পের মোড় কোন দিকে ঘুরাবে তা পাঠক শুরুতে চিন্তাও করতে পারবেন না।

পুরো উপন্যাস জুড়েই স্পর্শকাতর দুইটা বিষয় হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

**মেয়েসন্তানদের প্রতি বাবাদের ভালোবাসা কত তীব্র হয় তার অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে কণার বাবা ও তার শশুড়ের চরিত্রে।
**মনসুর-কণার মধ্যে গড়ে ওঠা আত্মার বন্ধন। কনার প্রতি মনসুরের ভালোবাসা এতই দৃঢ় ছিলো যে, জোহরার দুর্ধর্ষ আর নির্দয় ডাকাতি করার ক্ষমতাও মনসুরের মন থেকে কনাকে মুছে দিতে পারেনি। অনিচ্ছায় নির্বাসন জীবনে কনার মুখটাই মনসুরকে অপেক্ষায় বাঁচিয়ে রেখেছে। নির্বাসিত জীবন মনসুর কেমন কাটিয়েছে তা জানতে পাঠককে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে। তবে উপন্যাসটি পড়ে শেষে মনে হবে অসমাপ্ত!!

উপন্যাসটির কিছু দূর্দান্ত লাইন…

১. “মানুষের গভীরতম প্রার্থণা হয় একাকী, নীরবে, গোপনে।”
২. “চইলা যাওন যত সহজ, ফিরা আহন তত সহজ নারে।”
৩. “জগতের অনিশ্চিত অপেক্ষার চেয়ে ভয়ংকর কিছু নেই।”
৪. “জগতের নিসঙ্গ মানুষের কান্নার মতো এমন গভীর আর কিছু নেই।”
৫. “জীবন শেষ পর্যন্ত আক্ষেপেরই নাম। যেমনই হোক, আমাদের আক্ষেপ থেকেই যায়।”
৬. “জীবন কি আশ্চর্যরকম অনিশ্চিত, অনির্দেশ্য।­ আর মানুষ সেখানে কি ভীষণ অসহায়! এখানে নাটকের লিখে রাখা পাণ্ডুলিপিও মঞ্চস্থ হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে হুট করে বদলে যায়। হয়ে যায় অচেনা অন্য কোনো গল্প। সেই গল্পে মানিয়ে নিতে হয় কুশীলবদের। কিন্তু,মানিয়ে নেওয়া বড় কষ্টের।”
৭. “মায়া এমন এক জিনিস,যা মানুষকে অন্ধ করে দেয়, হিতাহিত জ্ঞানবুদ্ধি লোপ পাইয়ে দেয়।মায়ার প্রভাব ভালোবাসার চেয়েও বেশি।”

সর্বোপরি বলা যায় লেখকের নামকরণটি বেশ সুন্দর হয়েছে এবং একই সঙ্গে উপন্যাসের ভাষাও বেশ সাবলীল এবং প্রাণবন্ত। পাঠক যখন পাঠ করবেন, চোখের সামনেই সবটা কল্পনা করতে পারবেন এতোই সুন্দর এবং সাবলীল, সহজভাবে সবকিছু বর্ণনা করা হয়েছে। বইটি অনেক আগেই বেরিয়েছে বাজারে, যারা এখনও পড়েননি, তাঁদের জন্য নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের সেরা লেখকদের একজনের এই বইটি আকর্ষণীয় হতে পারে।

বইটি সম্পর্কে কিছু তথ্যাদি: 

নামঃ নির্বাসন
প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা_২০১৯
পৃষ্ঠাঃ ৩৭৬
মূল্যঃ ৫৯০/-

 

লেখক: হোমায়রা তাসনিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ২য় বর্ষ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।