১১:০১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শখকে কর্মে পরিণত করতে ‘পার্পেল কাউ’ নিয়ে এলো জাবির দুই শিক্ষার্থী

ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: প্রতিষ্ঠানের নাম ‘পার্পেল কাউ’! শুনতে বেশ অদ্ভুত লাগছে, তাইনা? হ্যা, এই অদ্ভুত নামটি ব্যবহার করেই অতি সম্প্রতি একটি অনলাইন ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ৪৭ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফাতিমা জান্নাত মীম এবং জেরিন রহমান। মূলত ঘরবাড়ি সাজানোর জন্যে নানা রকমের চিত্রকর্ম, শো পিছ কিংবা ক্যানভাস তৈরী করে তা অনলাইন মার্কেটিং এর সহায়তায় বাজারজাত করা এবং হস্তশিল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ানোই ‘পার্পেল কাউ’ এর মূখ্য উদ্দেশ্য। আইবিএ শিক্ষার্থীদের সাধারণত পড়াশুনাতেই বেশি সময় ব্যয় করতে দেখা যায়। তারপরও পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্রাবস্থায় এই ধরণের সৃজনশীল কাজে জড়ানোর পেছনের গল্পটা বলতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের একজন ফাতিমা জান্নাত মীম বলেন,

“মূলত স্ব-নির্ভর হওয়ার স্বপ্ন থেকেই এই ধরণের একটি উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা প্রথম মনে এসেছিলো। আপনি লক্ষ্য করলেই দেখবেন, ইদানীং অনেক ধরণের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই মাধ্যমে আপনি যে ব্যবসাই শুরু করুন না কেনো, তা জনপ্রিয় করে টিকে থাকা খুব কঠিন কাজ। ছোটবেলা থেকেই পেইন্টিং এর দিকে একটা আলাদা ঝোঁক কাজ করতো! প্রথম যখন ব্যবসা শুরুর কথা মনে আসে, চিত্রকর্ম কিংবা শো পিছ তৈরীর কথাটাই প্রথম মাথায় দোল খেতে লাগলো! আরেকটু প্রসারিত চিন্তা থেকেই মূলত হস্তশিল্পের কাজ জনপ্রিয় করার এই ব্যবসা মাধ্যমটি গড়ে তোলার দিকে মন দিলাম।”

তাঁর কথার সূত্র ধরেই পরের প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম। জানতে চাইলাম, “পার্পেল কাউ” – এমন অদ্ভুত নাম রাখার পেছনের কারণ কী! জবাবে মীম বলেন,

“ব্যবসা রিলেটেড পড়াশুনা করা ছাত্র-ছাত্রীরা এই ব্যাপারটা সহজে বুঝতে পারবে। পার্পেল কাউ আমাদের ব্যবসা রিলেটেড একটা টার্মের নাম যেখানে পণ্যের গুণগত মানের ব্যাপারে বলা হয়েছে। সেটা বলতে গেলে অবশ্য অনেকটা জুড়ে বলতে হবে। তবে মূলত সহজে এটেনশন পাবার কথা মাথায় রেখেই নামটি নেয়া হয়েছে।”

পার্পেল

“পার্পেল কাউ” যে পণ্য গুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে তৈরী করছে, তা কে বা কারা কী উপায়ে তৈরী করছে বা যোগান দিচ্ছে, তা জানতে চাইলে এর উত্তরে প্রতিষ্ঠানের আরেক উদ্যোক্তা জেরিন রহমান জানান,

“এখনও প্রারম্ভিক অবস্থায় রয়েছি আমরা। তাই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ থেকে কিছুটা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় এগোনোর চেষ্টা করছি। প্রাথমিক অবস্থায় নিজেরাই পণ্য তৈরীর পাশাপাশি নতুন উঠতি আর্টিস্টদের তৈরী করা পণ্য, পেইন্টিং ইত্যাদি বিক্রির মাধ্যম হিসেবে আমরা ‘পার্পেল কাউ’ তাঁদেরকে সহায়তা প্রদান করছি। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বানানো কারুপণ্য আমরা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। উদ্দেশ্য একটাই, শখটাও যেনো কর্মে পরিণত হয়!”

“পার্পেল কাউ” এর তৈরী দ্রব্যাদি কোন শ্রেণীর ক্রেতাদেরকে টার্গেট করে তৈরী করা হচ্ছে এবং কীভাবে তাঁরা সেই পণ্য হাতে পাবেন, এ ব্যাপারে জেরিনের সোজা সরল জবাব,

“আজকাল সৌখিন লোকজনের অভাব নেই। আগের দিনে আমরা ভাবতাম শুধুমাত্র যাদের ইনকাম অনেক উচ্চ পর্যায়ের, শুধু তারাই সৌখিন হতে পারেন। কিন্তু এখন দিনও পালটে গিয়েছে! দিনভর কাজের শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরটাকে একটু সুন্দর সাজানো দেখতে কে না চায়, তা সে উচ্চবিত্তই হোক কিংবা মধ্যবিত্ত! মূলত সেসব সৌখিন শ্রেণীয় মানুষজন যেনো সবচেয়ে স্বল্প ব্যয়ে তাঁদের শখ পূরণ করতে পারেন, সে দিকটা মাথায় রেখেই আমরা পণ্য তৈরী করছি এবং ক্রেতাগণ অনলাইন খুব সহজেই আমাদের পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। বর্তমানে আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজ “Purple Cow [https://web.facebook.com/purplecowbd/]” এর মাধ্যমে যাবতীয় অর্ডার নিচ্ছি এবং সাপ্লাই দিচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের ওয়েবসাইট ডেভেলপের কাজও হাতে নিয়েছি। খুব শীঘ্রই আমাদের ওয়েবসাইট ঠিকানা সবার সামনে আমরা প্রকাশ করবো।”

সর্বোপরি নারী শক্তির জয়গান ও জাগরণের কথাটা খুব জোর দিয়ে বললেন প্রতিষ্ঠানের দুজন উদ্যোক্তাই। দুজনের বক্তব্যের সারমর্মটা ছিলো এমন,

“মেয়েদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে আমাদের দেশ অনেক এগোচ্ছে এবং সর্বত্রই তাঁরা তাঁদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখছে। কিন্তু উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী হিসেবে এখনও নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। আমরা ভাগ্যবান আমাদের পরিবারও আমাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে এবং আমাদের নিজেদের ইচ্ছেও রয়েছে মেয়েরাও পারে, এই কথাটি প্রমাণ করে দেখানোর। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেনো আমরা নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু প্রমাণে সমর্থ হই।”

 

ট্যাগ:

শখকে কর্মে পরিণত করতে ‘পার্পেল কাউ’ নিয়ে এলো জাবির দুই শিক্ষার্থী

প্রকাশ: ০৪:৫৯:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল: প্রতিষ্ঠানের নাম ‘পার্পেল কাউ’! শুনতে বেশ অদ্ভুত লাগছে, তাইনা? হ্যা, এই অদ্ভুত নামটি ব্যবহার করেই অতি সম্প্রতি একটি অনলাইন ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে তুলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ৪৭ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ফাতিমা জান্নাত মীম এবং জেরিন রহমান। মূলত ঘরবাড়ি সাজানোর জন্যে নানা রকমের চিত্রকর্ম, শো পিছ কিংবা ক্যানভাস তৈরী করে তা অনলাইন মার্কেটিং এর সহায়তায় বাজারজাত করা এবং হস্তশিল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ানোই ‘পার্পেল কাউ’ এর মূখ্য উদ্দেশ্য। আইবিএ শিক্ষার্থীদের সাধারণত পড়াশুনাতেই বেশি সময় ব্যয় করতে দেখা যায়। তারপরও পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্রাবস্থায় এই ধরণের সৃজনশীল কাজে জড়ানোর পেছনের গল্পটা বলতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের একজন ফাতিমা জান্নাত মীম বলেন,

“মূলত স্ব-নির্ভর হওয়ার স্বপ্ন থেকেই এই ধরণের একটি উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা প্রথম মনে এসেছিলো। আপনি লক্ষ্য করলেই দেখবেন, ইদানীং অনেক ধরণের অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এই মাধ্যমে আপনি যে ব্যবসাই শুরু করুন না কেনো, তা জনপ্রিয় করে টিকে থাকা খুব কঠিন কাজ। ছোটবেলা থেকেই পেইন্টিং এর দিকে একটা আলাদা ঝোঁক কাজ করতো! প্রথম যখন ব্যবসা শুরুর কথা মনে আসে, চিত্রকর্ম কিংবা শো পিছ তৈরীর কথাটাই প্রথম মাথায় দোল খেতে লাগলো! আরেকটু প্রসারিত চিন্তা থেকেই মূলত হস্তশিল্পের কাজ জনপ্রিয় করার এই ব্যবসা মাধ্যমটি গড়ে তোলার দিকে মন দিলাম।”

তাঁর কথার সূত্র ধরেই পরের প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম। জানতে চাইলাম, “পার্পেল কাউ” – এমন অদ্ভুত নাম রাখার পেছনের কারণ কী! জবাবে মীম বলেন,

“ব্যবসা রিলেটেড পড়াশুনা করা ছাত্র-ছাত্রীরা এই ব্যাপারটা সহজে বুঝতে পারবে। পার্পেল কাউ আমাদের ব্যবসা রিলেটেড একটা টার্মের নাম যেখানে পণ্যের গুণগত মানের ব্যাপারে বলা হয়েছে। সেটা বলতে গেলে অবশ্য অনেকটা জুড়ে বলতে হবে। তবে মূলত সহজে এটেনশন পাবার কথা মাথায় রেখেই নামটি নেয়া হয়েছে।”

পার্পেল

“পার্পেল কাউ” যে পণ্য গুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে তৈরী করছে, তা কে বা কারা কী উপায়ে তৈরী করছে বা যোগান দিচ্ছে, তা জানতে চাইলে এর উত্তরে প্রতিষ্ঠানের আরেক উদ্যোক্তা জেরিন রহমান জানান,

“এখনও প্রারম্ভিক অবস্থায় রয়েছি আমরা। তাই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ থেকে কিছুটা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় এগোনোর চেষ্টা করছি। প্রাথমিক অবস্থায় নিজেরাই পণ্য তৈরীর পাশাপাশি নতুন উঠতি আর্টিস্টদের তৈরী করা পণ্য, পেইন্টিং ইত্যাদি বিক্রির মাধ্যম হিসেবে আমরা ‘পার্পেল কাউ’ তাঁদেরকে সহায়তা প্রদান করছি। ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বানানো কারুপণ্য আমরা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। উদ্দেশ্য একটাই, শখটাও যেনো কর্মে পরিণত হয়!”

“পার্পেল কাউ” এর তৈরী দ্রব্যাদি কোন শ্রেণীর ক্রেতাদেরকে টার্গেট করে তৈরী করা হচ্ছে এবং কীভাবে তাঁরা সেই পণ্য হাতে পাবেন, এ ব্যাপারে জেরিনের সোজা সরল জবাব,

“আজকাল সৌখিন লোকজনের অভাব নেই। আগের দিনে আমরা ভাবতাম শুধুমাত্র যাদের ইনকাম অনেক উচ্চ পর্যায়ের, শুধু তারাই সৌখিন হতে পারেন। কিন্তু এখন দিনও পালটে গিয়েছে! দিনভর কাজের শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে নিজের ঘরটাকে একটু সুন্দর সাজানো দেখতে কে না চায়, তা সে উচ্চবিত্তই হোক কিংবা মধ্যবিত্ত! মূলত সেসব সৌখিন শ্রেণীয় মানুষজন যেনো সবচেয়ে স্বল্প ব্যয়ে তাঁদের শখ পূরণ করতে পারেন, সে দিকটা মাথায় রেখেই আমরা পণ্য তৈরী করছি এবং ক্রেতাগণ অনলাইন খুব সহজেই আমাদের পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। বর্তমানে আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজ “Purple Cow [https://web.facebook.com/purplecowbd/]” এর মাধ্যমে যাবতীয় অর্ডার নিচ্ছি এবং সাপ্লাই দিচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের ওয়েবসাইট ডেভেলপের কাজও হাতে নিয়েছি। খুব শীঘ্রই আমাদের ওয়েবসাইট ঠিকানা সবার সামনে আমরা প্রকাশ করবো।”

সর্বোপরি নারী শক্তির জয়গান ও জাগরণের কথাটা খুব জোর দিয়ে বললেন প্রতিষ্ঠানের দুজন উদ্যোক্তাই। দুজনের বক্তব্যের সারমর্মটা ছিলো এমন,

“মেয়েদের পড়াশুনার ক্ষেত্রে আমাদের দেশ অনেক এগোচ্ছে এবং সর্বত্রই তাঁরা তাঁদের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখছে। কিন্তু উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী হিসেবে এখনও নারীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন। আমরা ভাগ্যবান আমাদের পরিবারও আমাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে এবং আমাদের নিজেদের ইচ্ছেও রয়েছে মেয়েরাও পারে, এই কথাটি প্রমাণ করে দেখানোর। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেনো আমরা নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু প্রমাণে সমর্থ হই।”