১১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“লাগামহীন নিষ্ঠুরতায় পরিণত চিকিৎসা খাত”

  • আপডেট: ০৫:১৯:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • 149

সম্প্রতি ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুল চিকিৎসা, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। লাগামহীন নৈরাজ্যে নিষ্ঠুরতায় পরিণত হয়েছে চিকিৎসা খাত।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দশ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিদকে সুন্নতে খতনা করাতে নিলে লোকাল এনেস্থেসিয়া না দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত জেনারেল এনেস্থেসিয়া দেয়াতেই শিশুটির মারা গেছে বলে অভিযোগ করে শিশুটির পরিবার। কিছুদিন আগেও রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আরেক শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। এছাড়াও, গত ১৬ জানুয়ারি বরগুনার বামনায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি নারী মেঘলাকে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনভিজ্ঞ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সবুজ কুমার দাসসহ ৫-৬ জন মিলে তার অস্ত্রোপচার শুরু করেন।

প্রকাশিত সংবাদের তথ্য অনুযায়ী সেখানে মেঘলার পেটে অস্ত্রোপচারের প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবস্থা বেগতিক দেখে জীবিত নবজাতক সন্তানকে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দ্রুত বরিশালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে পথে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কমিশনের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিহত মেঘলার পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

এছাড়াও, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর ছেলেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা চরম নির্যাতন করে বলে জানা যায়। অন্যদিকে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসকদের ফি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করানোর জন্য ফি দিতে গিয়ে রোগীদের প্রচুর অর্থ খরচ করতে হলেও আশানুরূপ চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, আস্থাহীনতার কারণে বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে যায়, যার ফলে বর্তমান সংকট সময়েও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও বেহাত হচ্ছে।

সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যখাতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনা কমিশন লক্ষ্য করছে। এসব ঘটনা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। এর ফলে স্বাস্থ্য খাতটি চরম নৈরাজ্য/নিষ্ঠুরতার খাত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। দেশ যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে স্বাস্থ্য খাতের চরম নৈরাজ্য কোনোভাবেই প্রত্যাশিত কিংবা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এ অবস্থায় শিশু আয়ান, আহনাফসহ ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নিহত রোগীদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আহবান জানায় কমিশন।

ট্যাগ:

“লাগামহীন নিষ্ঠুরতায় পরিণত চিকিৎসা খাত”

প্রকাশ: ০৫:১৯:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সম্প্রতি ঢাকা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুল চিকিৎসা, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে রোগীদের মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। লাগামহীন নৈরাজ্যে নিষ্ঠুরতায় পরিণত হয়েছে চিকিৎসা খাত।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কমিশনের উপ-পরিচালক ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি দশ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিদকে সুন্নতে খতনা করাতে নিলে লোকাল এনেস্থেসিয়া না দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত জেনারেল এনেস্থেসিয়া দেয়াতেই শিশুটির মারা গেছে বলে অভিযোগ করে শিশুটির পরিবার। কিছুদিন আগেও রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আরেক শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়। এছাড়াও, গত ১৬ জানুয়ারি বরগুনার বামনায় লাইসেন্সবিহীন অবৈধ সুন্দরবন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রসূতি নারী মেঘলাকে ভর্তি করানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনভিজ্ঞ আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সবুজ কুমার দাসসহ ৫-৬ জন মিলে তার অস্ত্রোপচার শুরু করেন।

প্রকাশিত সংবাদের তথ্য অনুযায়ী সেখানে মেঘলার পেটে অস্ত্রোপচারের প্রায় দুই ঘণ্টা পর অবস্থা বেগতিক দেখে জীবিত নবজাতক সন্তানকে ফের মায়ের পেটে ঢুকিয়ে দ্রুত বরিশালে নিতে বলেন চিকিৎসকরা। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে পথে ভাণ্ডারিয়া হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কমিশনের তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নিহত মেঘলার পরিবারকে ক্ষতিপূরণসহ দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

এছাড়াও, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর ছেলেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা চরম নির্যাতন করে বলে জানা যায়। অন্যদিকে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে চিকিৎসকদের ফি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করানোর জন্য ফি দিতে গিয়ে রোগীদের প্রচুর অর্থ খরচ করতে হলেও আশানুরূপ চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, আস্থাহীনতার কারণে বিপুল সংখ্যক রোগী চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন দেশে যায়, যার ফলে বর্তমান সংকট সময়েও দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও বেহাত হচ্ছে।

সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যখাতে প্রতিনিয়ত সংঘটিত অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতার বিভিন্ন ঘটনা কমিশন লক্ষ্য করছে। এসব ঘটনা জাতির জন্য চরম দুর্ভাগ্যজনক। এর ফলে স্বাস্থ্য খাতটি চরম নৈরাজ্য/নিষ্ঠুরতার খাত কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। দেশ যেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে স্বাস্থ্য খাতের চরম নৈরাজ্য কোনোভাবেই প্রত্যাশিত কিংবা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এ অবস্থায় শিশু আয়ান, আহনাফসহ ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নিহত রোগীদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জন্য আহবান জানায় কমিশন।