রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বিয়েবাড়ির যাত্রী নিয়ে দুটি নৌকা ডুবে গেছে। এতে নববধূসহ অন্তত ৩০ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশকিছু শিশুও আছে।
শুক্রবার সন্ধ্যার পরে রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকার বিপরীতে মধ্যপদ্মায় এই নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। নৌকাডুবিতে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে নৌকাডুবির পর ১১ জন জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিয়ের ফিরনি অনুষ্ঠান শেষে বরের বাড়ি থেকে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
উদ্ধার হওয়া এক যুবকের তথ্যমতে, দুটি নৌকা ডুবেছে এবং এতে অন্তত ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছে। তবে সংখ্যাটি নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। নিখোঁজের সংখ্যা আরও বাড়তে কিংবা কমতে পারে।
জানা গেছে, বরের নাম রুমন আলী (২৬)। তার বাড়ি পদ্মার ওপারে পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামে। বাবার নাম ইনসার আলী। আর কনের নাম সুইটি খাতুন (২০)। তার বাড়ি রাজশাহী শহর সংলগ্ন পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামে। বাবার নাম শাহীন আলী।
প্রায় দুই মাস আগে রুমন-সুইটির বিয়ে হয়। গতকাল দুপুরের দিকে সুইটির আত্মীয়-স্বজনরা বর-কনেকে আনতে গিয়েছিলেন। আজ ফেরার পথে মাঝপদ্মায় নৌকা ডুবে যায়।
ঘটনার পর বর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছেন। এছাড়া আরও ১০ জনকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানা গেছে। এদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে তারা হলেন- নৌকা চালক খাদিমুল ইসলাম (২৩), বৃষ্টি খাতুন (২২), রানা (১৭), মিঠু (২২), সুমন আলী (২৮) ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম (২২) এবং মেয়ে সুমনা আক্তার (৬)। বৃষ্টি খাতুন জীবিত উদ্ধার হলেও তার মেয়ে মরিয়ম খাতুন (৬) মারা গেছে। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মায়ের সঙ্গে তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে বৃষ্টির স্বামী রতন নিখোঁজ আছেন। আর মেয়েকে নিয়ে সাঁতরে উঠেছিলেন সুমন-নাসরিন দম্পতি।
নৌকাডুবির পর আশপাশের অসংখ্য মানুষ এবং স্বজনরা শ্রীরামপুর এলাকায় নদীপাড়ে ভিড় করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। রাতেই পদ্মাপাড়ে যান সিটি মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্তও নিখোঁজদের কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। বিজিবি সদস্যরাও স্পিডবোট নিয়ে নদীতে ভাসমান মানুষ খুঁজছেন। নদীপাড়ে প্রস্তুত রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স।
উদ্ধার হওয়া রানা নামের এক যুবক জানান, দুটি নৌকা পাশাপাশি আসছিলো। প্রথমে একটি নৌকার তলা ফেটে পানি উঠতে শুরু করে। এতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় এই নৌকার যাত্রীদের অপর আরেকটি নৌকায় নেয়া হচ্ছিল। তখন অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে এই নৌকাটিও ডুবে যায়। এক শিশুর লাশসহ মোট ১২ জন জীবিত উদ্ধার হলেও এখনও ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে ধারণা করছেন রানা।
রাত সাড়ে ১০টায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের রাজশাহী সদর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, রাত ৭টা ৯ মিনিটে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে তাদের নৌকাডুবির বিষয়ে জানানো হয়। এক মিনিটের মধ্যে তারা বেরিয়ে পড়েন। তবে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তারা কাউকে উদ্ধার করতে পারেননি। যারা উদ্ধার হয়েছেন তারা কেউ সাঁতরে উঠেছেন আবার কয়েকজনকে বালু বহন করা ট্রলার নিয়ে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসেরও উদ্ধার তৎপরতা চলছে। নিখোঁজ কতজন রয়েছেন সেটি তারা নিশ্চিত নন বলে জানান আব্দুর রউফ।