তানজিরুল হুসাইন রাববি:
আজিজ সাহেব।
গত তিন বছর ধরে চাকরি করছেন সরকারি এই অফিসটিতে। যদিও ঘুষ দিয়ে ঢুকেছেন বাট এখন পর্যন্ত ঘুস নেন নি তার দাপ্তরিক কাজের জন্য। আসলে কি, ঘুষ নেয়ার জন্য সাহস লাগে তাই তার কাছে কদাচিৎ সে সুযোগ আসে! তাছাড়া টুকটাক ধম্ম-কম্মও করে থাকেন আর কি। ছোট ছেলেটি তার সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। নুন আনতে পান্তা ফুরায় টাইপের টানাটানি সংসারে যা হয় আর কি!
************************************
করিম সাহেব।
আজিজ সাহেবের পাশের টেবিলে কাজ করেন। জুনিয়র হলেও আজিজ সাহেবের সাথে তার বেশ সখ্যতা রয়েছে। নামাজ-কালামের ধার ধারেন না। তবে সরকারদলীয় পলিটিক্স করার সুবাদে প্রায়শই হজ্বে যাবার সুযোগ পেয়ে যান। তার একটা অদ্ভূত ধর্মদর্শন, “পাপ-টাপ যাই করি শেষ বয়সে কিছু ধম্ম-কম্ম করে আমলনামাকে একেবারে সার্ফএক্সেলের মতন ধবধবে সাদা করে ফেলবো।”
তার মেয়েটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে আর ছোট ছেলেটি শহরের নামকরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ছে। আসছে রোজার ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে ফ্যামিলি ট্যুরে যাবার বন্দোবস্ত করেছেন।
*************************************
সোমবার, জুন ২০১৭।
করিম সাহেবের পুরাতন একজন ক্লায়েন্ট কোন একটা কাজের জন্য সকাল থেকে আজিজ সাহেবের পিছনে ঘুরঘুর করছে। আজিজ সাহেবের সাফ কথা নিয়মের বাইরে তাকে কাজ পাইয়ে দিতে পারবেন না। অগত্যা লোকটি করিম সাহেবের কাছে গেলে :
করিমঃ আরে ভাই দিন না কাজটা করে, কিছু উপরি আসবে আর আপনার প্রাকটিস ম্যাচটা খেলাও হয়ে যাবে পরে ভাই ওয়ান ডে তে ডাক পাবেন বুজেছেন! টেনেটুনে আর কতদিন!
আজিজঃ তাই বলে…..
করিমঃ আরে ভয়ের কিছু নেই। বস থেকে শুরু করে অফিসের আমরা প্রায় সবাই এখন আইপিএল খেলছি!
সেই প্রাইজমানি!
আজিজ সাহেব তার সহকর্মীর কথায় প্রভাবিত হয়ে প্রথমবারের মতন উপরি আয় করলেন।
****************************
দুপুর তিনটা।
উপরির নোটগুলো আজিজ সাহেব বারবার নেড়েচেড়ে দেখছেন। বেশ ফুরফুরে মুডে, তাছাড়া প্রতিদিন বউয়ের ঝাড়ি খেতেও তার ভাল লাগে না। হঠাৎ খেয়াল করলেন, পাশের টেবিলের করিম সাহেব ফোনে কান্নাস্বরে কার সাথে যেন কথা বলছেন! দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে গেলেন। যাবার সময়ে আজিজ সাহেবের কাছে দোয়া চেয়ে বলে গেলেন তার স্ত্রী স্ট্রোক করেছেন।
বেলা চারটা। অফিস ছুটি।
আজিজ সাহেব গেট থেকে বের হবেন এমন সময় তার মোবাইল বেজে উঠলো:
“এই তুমি তাড়াতাড়ি এপেলো হাসপাতালে আসো, স্কুল থেকে ফিরবার সময় রিকশা থেকে পড়ে বাবুর ডান পা ভেঙে গেছে। ভর্তি করাতে হবে, বেশ কিছু টাকা নিয়ে এসো”।
***********************************
এপেলো হাসপাতাল।
করিম সাহেবের স্ত্রী এখন সুস্থ্য।
তার পাশে বসে করিম সাহেব ভাবছেন, “আজ ঘুষের টাকাগুলো না থাকলে কী যে হত! কালকে থেকে আরও বেশী করে ম্যাচ খেলতে হবে।”
*************************************
অর্থোপেডিক্স বিভাগ।
সাত নম্বর বেডে শয্যাশায়ী রোগীটির মাথার হাত বুলাতে বুলাতে আজিজ সাহেব ভাবছেন, “আজ ঘুষ খেয়েছেন বলেই আল্লাহ তার ছেলেকে এই শাস্তি দিয়েছেন। কাল থেকে কখনোই এইসবের ধারে কাছে যাবেন না। সারাজীবন টেস্ট ম্যাচের দর্শক হয়ে থাকবেন তাও ভালো।”
************************************
এশার আযান হচ্ছে।
বেসিনে ওযু করে মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি দোতলার সিড়ি বেয়ে নিচে নামছেন…………..!
লেখক: তানজিরুল হুসাইন রাববি, প্রভাষক, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ময়মনসিংহ।