Dhaka 6:50 am, Friday, 1 December 2023

  • Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/page/header_design_two.php on line 68

আয়না

  • Reporter Name
  • Update Time : 01:17:45 pm, Tuesday, 19 May 2020
  • 30 Time View

রাকিব আহসান: মতি মিয়াঁ তার নতুন কেনা আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে। তার ছেলেটা বলেছে আয়না নাকি আসলে মিথ্যে দেখায়। মানুষের ডান দিককে দেখায় বাম আর বাম দিককে দেখায় ডান। গনি মিয়াঁ অবশ্য এত কিছু বুঝেন না। তিনি সামান্য কৃষক। কিন্তু তার ছেলেটাকে সাইন্স এ পড়াচ্ছেন। প্রায়ই বিজ্ঞানের অদ্ভুত সব ব্যাপার বলে,সব না বুঝলেও তিনি চোখ বড় বড় করে শুনেন। শুনতে ভালো লাগে। তিনি মূর্খ মানুষ,ছেলেটা এত কিছু জানে দেখে গর্ব হয় তার।

“ও গনি মিয়া,বাইত আছো নি?” সামনের বাড়ীর আতাউর মুন্সীর হাক-ডাক এ বাস্তবে ফিরে এলেন তিনি। গনি মিয়াঁর ঘরে আয়না দেখে হাসলো আতাউর। “বাহ,গরীব ঘরে নবাবী একখান জিনিস আনসো দেহা যায়”। সে ও এলো আয়নার সামনে। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার! আতাউরকে আয়নায় দেখা যাচ্ছে অন্যরকম। তার হাতে ধরা  একটা ঝাকি জাল,অনেকটা গনি মিয়াঁর বাড়ী থেকে চুরি যাওয়া জালটার মতই। অথচ আতাউরের হাতে কোনো জাল নেই।

দ্রুতই গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো গনি মিয়াঁর বাড়ীতে একটা অদ্ভুত কিসিমের আয়না আছে। এর ভিতরে নাকি কাউকে স্বাভাবিক আবার কাউকে একদমই অন্যরকম দেখা যায়।গ্রামের দারোগা সাহেব ও খবর শুনে আসলেন। আয়নার সামনে দাড়াতেই অদ্ভুত দৃশ্য,স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বড় ভুড়ি দেখাচ্ছে তার আয়নায়। হাতে বেশ কিছু করকরা টাকার নোট এর একটা ব্রিফকেস ধরে আছেন। মুখখানি চিমসে গেলো দারোগা বাবুর। কোনো কথা না বলে বিদায় নিলেন। তিনি বুদ্ধিমান লোক, অনেক কিছুই বুঝে নিয়েছেন। এই আয়না সত্য বলা শুরু করেছে! গ্রামে চাউড় হলো গনি মিয়াঁর আয়নার ঘটনা। নানা জনের নানা কথা। কেউ বলছে আয়নার উপর জ্বীনের আছর আছে, নাহলে এমন তাজ্জব ব্যাপার কেউ আগে দেখে নাই।

ঘটনা গ্রামের চেয়ারম্যান পর্যন্ত গড়ালো। তিনিও আসলেন একদিন আয়না দেখতে। একগাদা মানুষের ভিড়ের মধ্যে তিনি আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। কিন্তু একি! পাঞ্জাবী-পাজামা পড়া চেয়ারম্যান সাহেবকে আয়নায় দেখাচ্ছে মালকোচা মারা লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া, তাও নানা জায়গায় ছেঁড়া। তাকে দেখতে লাগছে অনেকটা গ্রামের গেদু চোরার মত। তার হাতে আর আশেপাশে গত বন্যার রিলিফের ত্রাণের বস্তা। একগাদা ত্রাণ এলেও হাতে গোনা কয়েকজনই পেয়েছিলো তা। এই নিয়ে নানান মহলে নানান কথা উঠলেও চেয়ারম্যান সাহেবের সামনে কেউ উচ্চবাচ্য করার সাহস করে নি। আয়নায় এই দৃশ্য দেখে অনেকেই মুখ টিপে হাসলো। আয়নার রহস্য অনেকের কাছেই পরিস্কার এখন। আরো ভালো বুঝেছেন চেয়ারম্যান সাহেব। কোনো কথা না বলে তার সঙ্গী হাবুকে নিয়ে পত্রপাঠ বিদায় নিলেন তিনি।

সেদিন রাতেই গনি মিয়াঁর বাড়ীতে চুরি হলো অদ্ভুত ব্যাপার, চোর তেমন কিছুই নেয় নি। শুধু গনি মিয়াঁর সেই অদ্ভুত আয়নাটা আর খুজে পাওয়া গেলো না। গ্রামেরই কোনো এক জায়গায় মাটি চাপা দেওয়া আছে সেই আয়না। মিথ্যে বলা সাধারণ আয়নাতেই সবাই খুশী। সত্য বলা আয়নার প্রয়োজন নেই।

লেখক: রাকিব আহসান, শিক্ষার্থী, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, বুটেক্স

 

আরও পড়ুন, নিয়তি, Majority divided by minority!

Tag :

Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/common/single_two.php on line 177

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

Notice: Undefined index: footer_custom_code in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/footer.php on line 87

আয়না

Update Time : 01:17:45 pm, Tuesday, 19 May 2020

রাকিব আহসান: মতি মিয়াঁ তার নতুন কেনা আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে। তার ছেলেটা বলেছে আয়না নাকি আসলে মিথ্যে দেখায়। মানুষের ডান দিককে দেখায় বাম আর বাম দিককে দেখায় ডান। গনি মিয়াঁ অবশ্য এত কিছু বুঝেন না। তিনি সামান্য কৃষক। কিন্তু তার ছেলেটাকে সাইন্স এ পড়াচ্ছেন। প্রায়ই বিজ্ঞানের অদ্ভুত সব ব্যাপার বলে,সব না বুঝলেও তিনি চোখ বড় বড় করে শুনেন। শুনতে ভালো লাগে। তিনি মূর্খ মানুষ,ছেলেটা এত কিছু জানে দেখে গর্ব হয় তার।

“ও গনি মিয়া,বাইত আছো নি?” সামনের বাড়ীর আতাউর মুন্সীর হাক-ডাক এ বাস্তবে ফিরে এলেন তিনি। গনি মিয়াঁর ঘরে আয়না দেখে হাসলো আতাউর। “বাহ,গরীব ঘরে নবাবী একখান জিনিস আনসো দেহা যায়”। সে ও এলো আয়নার সামনে। কিন্তু কি অদ্ভুত ব্যাপার! আতাউরকে আয়নায় দেখা যাচ্ছে অন্যরকম। তার হাতে ধরা  একটা ঝাকি জাল,অনেকটা গনি মিয়াঁর বাড়ী থেকে চুরি যাওয়া জালটার মতই। অথচ আতাউরের হাতে কোনো জাল নেই।

দ্রুতই গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো গনি মিয়াঁর বাড়ীতে একটা অদ্ভুত কিসিমের আয়না আছে। এর ভিতরে নাকি কাউকে স্বাভাবিক আবার কাউকে একদমই অন্যরকম দেখা যায়।গ্রামের দারোগা সাহেব ও খবর শুনে আসলেন। আয়নার সামনে দাড়াতেই অদ্ভুত দৃশ্য,স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বড় ভুড়ি দেখাচ্ছে তার আয়নায়। হাতে বেশ কিছু করকরা টাকার নোট এর একটা ব্রিফকেস ধরে আছেন। মুখখানি চিমসে গেলো দারোগা বাবুর। কোনো কথা না বলে বিদায় নিলেন। তিনি বুদ্ধিমান লোক, অনেক কিছুই বুঝে নিয়েছেন। এই আয়না সত্য বলা শুরু করেছে! গ্রামে চাউড় হলো গনি মিয়াঁর আয়নার ঘটনা। নানা জনের নানা কথা। কেউ বলছে আয়নার উপর জ্বীনের আছর আছে, নাহলে এমন তাজ্জব ব্যাপার কেউ আগে দেখে নাই।

ঘটনা গ্রামের চেয়ারম্যান পর্যন্ত গড়ালো। তিনিও আসলেন একদিন আয়না দেখতে। একগাদা মানুষের ভিড়ের মধ্যে তিনি আয়নার সামনে দাঁড়ালেন। কিন্তু একি! পাঞ্জাবী-পাজামা পড়া চেয়ারম্যান সাহেবকে আয়নায় দেখাচ্ছে মালকোচা মারা লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া, তাও নানা জায়গায় ছেঁড়া। তাকে দেখতে লাগছে অনেকটা গ্রামের গেদু চোরার মত। তার হাতে আর আশেপাশে গত বন্যার রিলিফের ত্রাণের বস্তা। একগাদা ত্রাণ এলেও হাতে গোনা কয়েকজনই পেয়েছিলো তা। এই নিয়ে নানান মহলে নানান কথা উঠলেও চেয়ারম্যান সাহেবের সামনে কেউ উচ্চবাচ্য করার সাহস করে নি। আয়নায় এই দৃশ্য দেখে অনেকেই মুখ টিপে হাসলো। আয়নার রহস্য অনেকের কাছেই পরিস্কার এখন। আরো ভালো বুঝেছেন চেয়ারম্যান সাহেব। কোনো কথা না বলে তার সঙ্গী হাবুকে নিয়ে পত্রপাঠ বিদায় নিলেন তিনি।

সেদিন রাতেই গনি মিয়াঁর বাড়ীতে চুরি হলো অদ্ভুত ব্যাপার, চোর তেমন কিছুই নেয় নি। শুধু গনি মিয়াঁর সেই অদ্ভুত আয়নাটা আর খুজে পাওয়া গেলো না। গ্রামেরই কোনো এক জায়গায় মাটি চাপা দেওয়া আছে সেই আয়না। মিথ্যে বলা সাধারণ আয়নাতেই সবাই খুশী। সত্য বলা আয়নার প্রয়োজন নেই।

লেখক: রাকিব আহসান, শিক্ষার্থী, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট, বুটেক্স

 

আরও পড়ুন, নিয়তি, Majority divided by minority!