অনিন্দ্য সুন্দর বিশ্বাস: স্কয়ার লেগে ফ্লিক আর স্ট্রেইট ড্রাইভ- পরপর দুই বলে দুটো দুর্দান্ত চারের পর তৃতীয় বলে আপিশ খেলাটা নির্বুদ্ধিতা ছাড়া কিছুই নয়। এই একটা ভুলের কারণেই পরের ম্যাচে স্কোয়াড থেকে বাদ পড়তে পারে রঞ্জন। তাও তো কোচকে বলেনি যে, তার ডান হাতের বুড়ো আঙুলের ফ্র্যাকচারের ব্যথাটা এখনও কমে নি, বা’পায়ের অ্যাঙ্কলও মচকেছে একটু প্রথম ম্যাচে। টিমে তার সাবস্টিটিউট রূপক, তিন ম্যাচ বসে আছে, একেবারে ফিট হয়ে। তার ওপর রূপক বাঁহাতি, সে ‘অ্যাডভানটেজ’ তো আছেই। কেবল প্রতি ম্যাচে রান পাচ্ছে বলেই কোচ এখনও বসায় নি রঞ্জনকে। মাঠে থাকাটা খুব দরকার তার এখন। ম্যাচের দুশ্চিন্তাটা অনেক কিছু ভুলে থাকতে সাহায্য করছে ওকে।
রঞ্জনের বাবা-মা’র খুব শিগগিরই ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে বোধ হয়। তুমুল ঝগড়া হচ্ছে প্রতিদিন, আর শেষে ডিভোর্সের কথা দিয়েই বিরতি পাচ্ছে। রঞ্জনের বাবা পরশ শিকদারের এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, তার আর তিতলির সম্পর্কটা কোনোদিন ঠিকঠাক ছিলই না। আসলে একটা সংসার টিকিয়ে রাখতে হলে সামান্য একটু বাড়তি যত্ন লাগেই। পরশ এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিতলিও একটা সময়ের পর আর চেষ্টা করেন নি।
ক্যাচটা নিতে পারুক না পারুক, স্লোয়ার বলে উপরে তুলে দিয়ে বোলারের কাছে মেন্টাল গেম এ হেরে গেছে রঞ্জন। চার ছয় মারার চেয়ে বোলারের ছকটা ধরে ফেলতে পারার মধ্যেই যে একজন ব্যাটসম্যানের সাফল্য আর আনন্দ, তা কি সে জানে না? ব্যাটিং এর সময় এই ব্যাপারটাই তো উপভোগ করে সে। বড় আফসোস হচ্ছে এখন। টোপ গিলে বড়শির সুতোর মাথায় ঝুলে থাকা মাছের মত নিরুপায় চোখে বলের দিকে তাকালো রঞ্জন। পরপর দুটো চারের পর উইকেট পাওয়া, মানে বোলারেরই জয়। এসব চার খাওয়া তখন বোলারের ‘স্ট্রাটেজি’ হয়ে যায়। আগের চারের কোনো মূল্যই নেই তখন। বল উপরে ওঠার সাথে সাথেই মিডউইকেটের ফিল্ডার ভালো মুভ নিয়েছে। বল পড়তে পড়তে ক্যাচ নেয়ার জন্য খুব ভালো একটা পজিশনও নিয়ে নেবে। কিচ্ছু করার নেই এখন।
তিতলিকে অবশ্য দোষ দেয়া যায় না। একটা মানুষ একই সাথে উদাসীন, একগুঁয়ে আর প্রচণ্ড বদমেজাজী হলে আর কিছু করার থাকে না তাকে এড়িয়ে চলা ছাড়া। বিয়ের পর সুখীই ছিল দুজন। দুবছর পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল সবকিছু। রঞ্জন হলো। ছোট্ট খেলনাটা নিয়ে কিছু কাল ব্যস্ত থাকলো দুজন। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো রঞ্জন, দায়িত্ব বাড়তে থাকলো, পরশও বদলাতে থাকলো। রঞ্জন যেবার পাঁচে পড়লো, সেই জন্মদিনের দিন সকালেই অফিসের কাজে বাইরে চলে যায় পরশ। ফেরে তিনদিন পরে। এর মধ্যে কোনো যোগাযোগ নেই। সেদিনই তিতলি বুঝে নিয়েছিলেন এই লোকের সঙ্গে তার দুর্ভোগ আছে। বিয়ের বছর সাতেকের মধ্যেই যে তিক্ততা শুরু হয় তাদের মধ্যে সেটা আর কমে নি কখনও।
ননস্ট্রাইকে থাকা বিশু ভালোই মারছিলো। ওভারের বিরতিতেই কথা হলো দুই ব্যাটসম্যানের। বিশু যেহেতু ভালো বল পাচ্ছে, মারমুখী খেলুক ও, রঞ্জন ধরে খেলুক। তারপর তিনটে বল যেতে না যেতেই এই অবস্থা। বিশুর দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে রঞ্জন। তবু সেরা ফিল্ডারটারও তো ক্যাচ মিস হয়, এই আশায় রানের জন্য ছুটলো রঞ্জন। কিছু ব্যাপার মাঝে মাঝে নিয়তির কাছে ছেড়ে দিতে হয়। এই যেমন- বাবা, মা আর তার ভবিষ্যত এখন কী হবে তাও রঞ্জন নিয়তির ওপরই ছেড়ে দিয়েছে।
লেখক: অনিন্দ্য সুন্দর বিশ্বাস, শিক্ষার্থী, ফার্মেসী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুন, আয়না , Majority divided by minority!