০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বশেমুরকৃবিতে আন্দোলনের পঞ্চম দিন, নীরব প্রশাসন, অসুস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রোজা রেখে টানা পঞ্চম দিনের মতো অতিরিক্ত জরিমানা ও বিভিন্ন বাড়তি ফি আদায়ের প্রতিবাদে তিন দফা দাবিতে আজও (২৮ মে, ২০১৯ ইং) আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যেই আন্দোলনে বেশ কজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হবার খবর পাওয়া গিয়েছে।

বশেমুরকৃবি

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা সমস্বরে “তিন দফা মেনে নাও, প্রয়োজনে রক্ত নাও”; “স্বৈরাচার নিপাত যাক, বশেমুরকৃবি মুক্তি পাক”; “শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা, মানি না মানবো না” প্রভৃতি নানা রকমের স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছেন ক্যাম্পাস প্রাঙ্গন।

ক্লাসের উপস্থিতির উপর জরিমানা আদায়ের নোটিশ জারি হওয়ার পর গত ২২ মে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে তিন দফা দাবি আদায়ে সোচ্চার হন।

শিক্ষার্থীরা জানান, হঠাৎ করেই বশেমুরকৃবি প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যদি কোন শিক্ষার্থী ৮০% এর নিচে ক্লাসে উপস্থিত থাকে, তাহলে তাকে জরিমানা দিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে হবে। শ্রেণীকক্ষে ৭০-৭৯% উপস্থিতি হলে ২০০০ টাকা এবং ৬০-৬৯% উপস্থিতি হলে ৫০০০ টাকা জরিমানা ধার্য্য করা হয়েছে প্রতি কোর্সের জন্য। ফলে প্রতি টার্মে জরিমানা হিসেবে শিক্ষার্থীদের দশ হাজার টাকা থেকে ত্রিশ হাজার টাকা এবং বাৎসরিক ত্রিশ হাজার থেকে নব্বেই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে।

পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করলেও প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলেন,

“আমরা গত পরশু গণস্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। কিন্তু শিক্ষকগণ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি এবং গতকাল একবার তাঁরা আমাদের মাঝে এসে বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন চলে যান।”

বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ও ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন এবং ঈদ পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আগামী মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় বেধে দেন এবং এর মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে আগামী মাসের ১৭ তারিখ থেকে কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আজকের কর্মসূচি শেষ করেন।

তারা বলেন, দেশের ১৩ তম এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বায়ত্তশাসনের নামে শিক্ষার্থীদের প্রতি স্বৈরাচারী আচরণ করে যাচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও এখন পর্যন্ত কোর্স ক্রেডিট সিস্টেমে বছরে তিনটি টার্ম শেষ করে। প্রতি টার্ম শুরুর ১৭ দিনের মাথায় ১ম মিড, ১ম মিড শেষ হবার ১৫ দিনের মাথায় ২য় মিড, আবার ২য় মিড শেষ হবার ২৭ দিনের মাথায় ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। এই মিডের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস, ল্যাব ক্লাস, কুইজ পরীক্ষা যথারীতি চলতে থাকে। পাশাপাশি ৮০% ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয় না।

তাদের অভিযোগ, বছরে তিনটি টার্মের (প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মত) শুরুতে প্রতি স্টুডেন্টের কাছে ফি বাবদ প্রায় ১২ হাজার টাকা নেয় প্রশাসন। প্রশাসন বিভিন্নভাবে ছাত্রছাত্রীদের হুমকি প্রদান করে ও বিভিন্ন অজুহাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে তাদের জীবন অতিষ্ঠ বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে:

১. ক্লাসে ৮০% উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করে যে জরিমানার বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে, সেটি বাতিল করতে হবে এবং পরীক্ষা দেওয়ার সর্বনিম্ন উপস্থিতি হার ৬০% করতে হবে।

২. অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিল রেখে এনরোলমেন্ট ফি ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিলম্ব ফি বাতিল করতে হবে।

৩. ২টি মিড পরীক্ষার একটি বাদ দিতে হবে এবং পরীক্ষার পর কোন ক্লাস-ল্যাব দেয়া যাবে না।

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

বশেমুরকৃবিতে আন্দোলনের পঞ্চম দিন, নীরব প্রশাসন, অসুস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ: ০৩:২০:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রোজা রেখে টানা পঞ্চম দিনের মতো অতিরিক্ত জরিমানা ও বিভিন্ন বাড়তি ফি আদায়ের প্রতিবাদে তিন দফা দাবিতে আজও (২৮ মে, ২০১৯ ইং) আন্দোলন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যেই আন্দোলনে বেশ কজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হবার খবর পাওয়া গিয়েছে।

বশেমুরকৃবি

আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা সমস্বরে “তিন দফা মেনে নাও, প্রয়োজনে রক্ত নাও”; “স্বৈরাচার নিপাত যাক, বশেমুরকৃবি মুক্তি পাক”; “শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা, মানি না মানবো না” প্রভৃতি নানা রকমের স্লোগানে মুখরিত করে রেখেছেন ক্যাম্পাস প্রাঙ্গন।

ক্লাসের উপস্থিতির উপর জরিমানা আদায়ের নোটিশ জারি হওয়ার পর গত ২২ মে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে তিন দফা দাবি আদায়ে সোচ্চার হন।

শিক্ষার্থীরা জানান, হঠাৎ করেই বশেমুরকৃবি প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যদি কোন শিক্ষার্থী ৮০% এর নিচে ক্লাসে উপস্থিত থাকে, তাহলে তাকে জরিমানা দিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে হবে। শ্রেণীকক্ষে ৭০-৭৯% উপস্থিতি হলে ২০০০ টাকা এবং ৬০-৬৯% উপস্থিতি হলে ৫০০০ টাকা জরিমানা ধার্য্য করা হয়েছে প্রতি কোর্সের জন্য। ফলে প্রতি টার্মে জরিমানা হিসেবে শিক্ষার্থীদের দশ হাজার টাকা থেকে ত্রিশ হাজার টাকা এবং বাৎসরিক ত্রিশ হাজার থেকে নব্বেই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে।

পঞ্চম দিনের মতো আন্দোলন করলেও প্রশাসন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেনি। শিক্ষার্থীরা বলেন,

“আমরা গত পরশু গণস্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। কিন্তু শিক্ষকগণ আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি এবং গতকাল একবার তাঁরা আমাদের মাঝে এসে বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন চলে যান।”

বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীরা তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ও ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন এবং ঈদ পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আগামী মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় বেধে দেন এবং এর মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে আগামী মাসের ১৭ তারিখ থেকে কঠোর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আজকের কর্মসূচি শেষ করেন।

তারা বলেন, দেশের ১৩ তম এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বায়ত্তশাসনের নামে শিক্ষার্থীদের প্রতি স্বৈরাচারী আচরণ করে যাচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও এখন পর্যন্ত কোর্স ক্রেডিট সিস্টেমে বছরে তিনটি টার্ম শেষ করে। প্রতি টার্ম শুরুর ১৭ দিনের মাথায় ১ম মিড, ১ম মিড শেষ হবার ১৫ দিনের মাথায় ২য় মিড, আবার ২য় মিড শেষ হবার ২৭ দিনের মাথায় ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। এই মিডের মধ্যেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস, ল্যাব ক্লাস, কুইজ পরীক্ষা যথারীতি চলতে থাকে। পাশাপাশি ৮০% ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয় না।

তাদের অভিযোগ, বছরে তিনটি টার্মের (প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির মত) শুরুতে প্রতি স্টুডেন্টের কাছে ফি বাবদ প্রায় ১২ হাজার টাকা নেয় প্রশাসন। প্রশাসন বিভিন্নভাবে ছাত্রছাত্রীদের হুমকি প্রদান করে ও বিভিন্ন অজুহাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে তাদের জীবন অতিষ্ঠ বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হচ্ছে:

১. ক্লাসে ৮০% উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করে যে জরিমানার বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে, সেটি বাতিল করতে হবে এবং পরীক্ষা দেওয়ার সর্বনিম্ন উপস্থিতি হার ৬০% করতে হবে।

২. অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিল রেখে এনরোলমেন্ট ফি ১০০০-১২০০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিলম্ব ফি বাতিল করতে হবে।

৩. ২টি মিড পরীক্ষার একটি বাদ দিতে হবে এবং পরীক্ষার পর কোন ক্লাস-ল্যাব দেয়া যাবে না।