Notice: Undefined index: custom_code in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/header.php on line 27
Dhaka 6:15 pm, Sunday, 1 October 2023

  • Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/page/header_design_two.php on line 68

আফগান পরিস্থিতি কী কাশ্মীরে মেঘ হিসেবে আবির্ভূত হবে?

  • Reporter Name
  • Update Time : 01:28:14 pm, Monday, 20 September 2021
  • 16 Time View

আভা খান্না: আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় আবারও ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে ভারতীয় ভূখন্ড থেকে শত মাইল দূরে আফগান তালেবানের দ্রুত উত্থান।

কাবুলে সরকার গড়েছে তালেবান। খবরটি যারপরনাই পুরোনো হয়ে গেলেও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে এর রেশ রয়ে যাবে বহুদিন। ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন এই সরকারে বেশ কিছু চমক দেখিয়েছে আফগান নেতৃত্ব, যা সার্বিকভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে যথেষ্ট পরিমাণ হুমকির মুখেই ফেলে দিয়েছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন হাক্কানি গোষ্ঠীর প্রধান নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি, যার উপর ৫ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছিলো ন্যাটো জোট। আফগানিস্তানে ভারতীয় বিভিন্ন সম্পদ এবং স্থাপনায় হামলার পেছনের মাস্টারমাইন্ডও এই সিরাজউদ্দিন। অথচ নিন্দিত জঙ্গী সিরাজউদ্দিনই বর্তমান তালেবানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে।

এছাড়াও, আফগান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন গুয়ানতানামো ফেরত বন্দী সহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তালিকায় থাকা প্রায় ১৭ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাই সার্বিকভাবে নতুন তালেবান নেতৃত্ব দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কতোটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, সে প্রশ্ন রয়েই যায়। তাছাড়া, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ‘জইশ’ এবং ‘লস্কর’ ইতোমধ্যে তাদের ঘাঁটি আফগানিস্তানে স্থানান্তরিত করেছে।

ভারত সবসময়ই আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাপী সকল প্ল্যাটফর্মেই আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপর সচেষ্ট থেকেছে ভারত। পাশাপাশি দেশটি যেনো সন্ত্রাসবাদের আখড়া না হয়ে উঠে, সে বিষয়েও বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোর দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত রয়েছে ভারত।

কিন্তু পাকিস্তানের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে মসনদে বসা তালেবান কী আদৌ স্বাভাবিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সীমাবদ্ধ থাকবে? এখানেই ভারতের নিরাপত্তা আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ।

সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো, তালেবানদের পুনরুত্থান কী কাশ্মীরে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর স্থাপিত শান্তি ও উন্নয়নের উপর কালো মেঘ হয়ে ধরা দিবে?

মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর থেকেই পাকিস্তানের গোপন এবং প্রত্যক্ষ সমর্থনে ভূখন্ডটি থেকে আশরাফ ঘানির সরকারকে সরিয়ে পুনরায় ক্ষমতা দখলে নেয়ার লড়াইয়ে মেতে উঠে আফগান তালেবান। অবশেষে প্রায় বিনা বাঁধায় কাবুল দখল এবং সরকার গঠনেও সক্ষম হয় তাঁরা। ফলস্বরূপ গোটা অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক ভূ-রাজনৈতিক খেলার।

ইতোমধ্যে ভারতীয় শীর্ষ কূটনীতিকগণ এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আইএসআই এবং আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে তালেবানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

এ আশঙ্কার পালে হাওয়া দিচ্ছে জঙ্গী গোষ্ঠী গুলোর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য ও কর্মকান্ড। গত ০২ সেপ্টেম্বর তালেবানের মুখপাত্র সুহেল শাহীন বিবিসিকে বলেন, “মুসলিম হিসেবে আমাদেরও কাশ্মীর, ভারত কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রে মুসলিমদের জন্য আওয়াজ তোলার অধিকার রয়েছে।”

এর আগে তালেবান আফগান বিজয়ের পর সংগঠনটিকে অভিনন্দন জানায় শীর্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদা। সে অভিনন্দন বার্তায় কাশ্মীর, সোমালিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্য ইসলামী ভূখণ্ড মুক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সংগঠনটি।

এছাড়াও, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পরপরই আফগানিস্তানে আটক নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের শীর্ষ সকল সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়। এটি ব্যাপকভাবে তালেবানের সন্ত্রাসী মনোভাবকে চিহ্নিত করে।

গত সপ্তাহেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছিলেন, আফগানিস্তানে ভারতের প্রথম লক্ষ্য দেশটির ভূখন্ড যেনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহৃত না হয়। এছাড়াও, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কীভাবে আটকানো যায়, তা নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ ইতোপূর্বেও ব্যক্ত করেছিলেন চীফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত।

তাই সর্বোপরি কাশ্মীরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর প্রভাব বাড়তে পারে বলে ব্যাপকভাবে আশঙ্কা করছে ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সি গুলো।

সকল মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান

ঐতিহাসিকভাবেই আফগানিস্তান নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে। উভয় দেশই স্বীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিবেচনায় আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছে। তাই স্বভাবতই যখনই আফগানিস্তানে ভারতীয় পছন্দের সরকার আসীন থেকেছে, পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। মুদ্রার উল্টোপিঠে পাক সরকার ঘনিষ্ঠ নেতৃত্ব যখনই আফগান মসনদে আসীন হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিদ্রাহীন বিস্তর রাত পাড় করেছে।

তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের মিত্রতা বর্তমানে একটি উন্মুক্ত গোপন বিষয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার মিডিয়ার সামনে তালেবানের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তালেবানের বিজয়কে দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত হওয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

এছাড়াও, সম্প্রতি পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দলের নেতা নীলম ইরশাদ শেখ বলেন, “তালেবানরা ভারত থেকে কাশ্মীরকে মুক্ত করতে আমাদের সাহায্য করবে।” অন্য আরেক অডিও বার্তায় পাক-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিযব-উল-মুজাহিদ্দিনের প্রধান সৈয়দ সালাহউদ্দিন তালেবানের বিজয়কে ‘অসাধারণ এবং ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আর্থিকভাবে পঙ্গু পাকিস্তানের জন্য ভারতের সঙ্গে প্রচলিত যুদ্ধ পরিচালনা ব্যাপক ব্যয়বহুল হবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গী রাষ্ট্রটি ভারতে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রক্সি যুদ্ধ চালাতে সচেষ্ট হবে বলে ধারণা করা যায়।

আফগানিস্তান কি সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রে পরিণত হবে?

ইতোমধ্যে তালেবান নেতৃত্বাধীন দেশটিতে ঘাঁটি গড়েছে আল কায়েদা, হাক্কানি নেটওয়ার্ক, জইশ, লস্কর এবং আইএসএস। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের পরবর্তী কেন্দ্র কী আফগানিস্তান?

আফগানিস্তানের সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলী মোহাম্মদের কথায়, “আফগানিস্তান এখন সন্ত্রাসীদের, মৌলবাদীদের এবং চরমপন্থীদের লাস ভেগাসে পরিণত হয়েছে। এটি বিশ্বজুড়ে অন্যান্য চরমপন্থীদের আফগানিস্তানে আসার পথ সুগম করছে।”

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি) এসপি বৈদ সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আইএসআই নিঃসন্দেহে তালেবানের কাছে সহায়তা চাইবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে পরিণতি দেয়ার লক্ষ্যে।”

তালেবানদের ‘সরকার গঠনের’ উপর পাক স্ট্যাম্প

তালেবানের প্রথম নেতা এবং প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব, যিনি ১৯৯৯ সালের IC-814 ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী ছিলেন, তিনি এখন আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সে ঘটনার আদ্যোপান্ত আমরা জানি। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর সঙ্গে সেবার ভারতের দহরম মহরমে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পাশে দাঁড়ায় পাকিস্তানের আইএসআই।

এবারও আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠনের পূর্বে কয়েকদিন কাবুলে অবস্থান করেন আইএসআই প্রধান। তাঁর চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই সরকার গঠন করে তালেবান। সরকার গঠনের দিন হিসেবেও ৯/১১ এর দিনকে চূড়ান্ত করে তাঁরা। তাই বলাই যায়, তালেবান সরকার গঠনের উপর স্ট্যাম্প রয়েছে পাকিস্তানেরই।

দক্ষিণ আফগানিস্তানের কাশ্মীর উপত্যকার কাছে বিমানঘাঁটি করেছে পাকিস্তান

সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান আফগানিস্তানের কাছে বেলুচিস্তানে এক বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছে। অত্র অঞ্চলে নজরদারি করার জন্যে এটি একটি বিশাল পদক্ষেপ হিসেবেই মনে করছে বোদ্ধামহল।

এছাড়াও, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোট এবং কোটলিতে ইতোপূর্বে বন্ধ হওয়া বেশ কিছু বিমান ঘাঁটি সক্রিয় করেছে পাকিস্তান। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা গুলোও সার্বক্ষণিকভাবে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগুলোর পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু দুর্ঘটনার যেকোনো সময়ই হানা দিতে পারে।

চীন ফ্যাক্টর

তালেবানের পুনরুত্থানে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে চীন। তালেবান নেতৃত্বকে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে পাকিস্তানের মিত্র চীন। খুব স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট বিদায়ের পর দেশটিতে প্রসার জমাতে চাইবে পাকিস্তান এবং চীন নেতৃত্ব। ইতোমধ্যে সরকার পরিচালনার জন্য তালেবান নেতৃত্বকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ দিয়েছে কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রটি।

একই সঙ্গে, আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর সম্প্রসারণের দিকেও নজর দিচ্ছে চীন। সে লক্ষ্যে প্রকল্পটিতে প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দও বৃদ্ধি করেছে তাঁরা। আফগানিস্তানের বৃহৎ খনিজ সম্পদ কাজে লাগানোর আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে দেশটির। তবে এখানেই আসলে সব সন্দেহের শুরু!

তাছাড়া, চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে আফগানিস্তানকে যুক্ত করতে পারলে অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হবে বেইজিং।

তালেবান নেতৃত্বও চীনকে নিজেদের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং পরোপকারী বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করছে। রাষ্ট্র চালানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ তালেবানের নেই। বন্ধ রয়েছে পশ্চিমা অনুদান। তাই স্বাভাবিকভাবেই চীন এখানে তাঁদের কার্যকর মিত্র।

আর চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ এবং লাদাখ অঞ্চলে চীনের দাবি অনেক পুরোনো বিষয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই অঞ্চলটিতে তালেবান সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে চীন। ফলস্বরূপ, প্রক্সি যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশাপাশি চীনের তরফেও হুমকির সম্মুখীন ভারত।

কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা

সাম্প্রতিক বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কাশ্মীরে আবারও বিদেশী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। দ্য হিন্দু পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী উত্তর কাশ্মীরে ৪০-৫০ জন বিদেশী এবং ১১ জন স্থানীয় সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে। গত এক দশকে প্রথমবারের মতো বিদেশি সন্ত্রাসীরা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চেয়ে বেশি বলে কোনো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলো। এটাও লক্ষণীয় যে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দক্ষিণ থেকে উত্তর কাশ্মীরে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

এসব সন্ত্রাসীদের মধ্যে আইএস-খোরাসানের সদস্যরা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এদের বেশ পুরোনো হাত রয়েছে। তাই বেশ ধাক্কা খাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের শান্তির ঘুম।

উদ্বিগ্ন বিশ্ব সম্প্রদায়

আফগানিস্তানে তালেবান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। এছাড়াও, সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, যুক্তরাজ্যের সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এমআই)) প্রধান রিচার্ড মুর এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ পৃথক প্রেক্ষাপটে ভারত সফরকালে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের প্রভাব বৃদ্ধিতে।

এছাড়াও, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধানদের সমন্বয়ে বৈঠক আয়োজন করেছে ভারত। জাতিসংঘেও বেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছে মোদী সরকার। নারীর ক্ষমতায়ন রোধ সহ বেশ কিছু কারণে বিশ্বজুড়ে সচেতন নাগরিকেরা উদ্বেগ জানিয়েছে তালেবান নেতৃত্ব ক্ষমতা দখলে নেয়ায়। নিজেদের নাগরিক সরিয়ে নিয়েছে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্র।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান দৃঢ় করতে নিরাপত্তা পরিষদে ইতোমধ্যে একটি রেজুলেশনও পাশ করেছিলো ভারত। তবে, জঙ্গী গোষ্ঠীটির পেছনে কয়েকটি বড় প্রভাবশালী রাষ্ট্রের স্বার্থের হাত জড়িয়ে থাকায় এসব উদ্যোগ এখনও সাফল্যের মুখ দেখেনি।

তাই এখন এটাই দেখতে অপেক্ষা করতে হবে যে, তালেবান নেতৃত্ব আদৌ দেশ পরিচালনায় মনযোগী হবে, নাকি কাশ্মীরে মেঘ হিসেবে আবির্ভূত হবে?

লেখক: কৌশলগত কূটনীতি এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। (প্রকাশিত লেখনী সম্পূর্ণই তাঁর নিজস্ব অভিমত)

অনুবাদ: ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল, বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক
Tag :

Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/common/single_two.php on line 177

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

Notice: Undefined index: footer_custom_code in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/footer.php on line 87

আফগান পরিস্থিতি কী কাশ্মীরে মেঘ হিসেবে আবির্ভূত হবে?

Update Time : 01:28:14 pm, Monday, 20 September 2021

আভা খান্না: আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় আবারও ভারতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর। এর পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রয়েছে ভারতীয় ভূখন্ড থেকে শত মাইল দূরে আফগান তালেবানের দ্রুত উত্থান।

কাবুলে সরকার গড়েছে তালেবান। খবরটি যারপরনাই পুরোনো হয়ে গেলেও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে এর রেশ রয়ে যাবে বহুদিন। ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট নতুন এই সরকারে বেশ কিছু চমক দেখিয়েছে আফগান নেতৃত্ব, যা সার্বিকভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে যথেষ্ট পরিমাণ হুমকির মুখেই ফেলে দিয়েছে।

দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন হাক্কানি গোষ্ঠীর প্রধান নেতা সিরাজউদ্দিন হাক্কানি, যার উপর ৫ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছিলো ন্যাটো জোট। আফগানিস্তানে ভারতীয় বিভিন্ন সম্পদ এবং স্থাপনায় হামলার পেছনের মাস্টারমাইন্ডও এই সিরাজউদ্দিন। অথচ নিন্দিত জঙ্গী সিরাজউদ্দিনই বর্তমান তালেবানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে।

এছাড়াও, আফগান সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন গুয়ানতানামো ফেরত বন্দী সহ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তালিকায় থাকা প্রায় ১৭ জন শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাই সার্বিকভাবে নতুন তালেবান নেতৃত্ব দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে কতোটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, সে প্রশ্ন রয়েই যায়। তাছাড়া, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন ‘জইশ’ এবং ‘লস্কর’ ইতোমধ্যে তাদের ঘাঁটি আফগানিস্তানে স্থানান্তরিত করেছে।

ভারত সবসময়ই আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাপী সকল প্ল্যাটফর্মেই আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপর সচেষ্ট থেকেছে ভারত। পাশাপাশি দেশটি যেনো সন্ত্রাসবাদের আখড়া না হয়ে উঠে, সে বিষয়েও বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোর দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত রয়েছে ভারত।

কিন্তু পাকিস্তানের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে মসনদে বসা তালেবান কী আদৌ স্বাভাবিক রাষ্ট্র পরিচালনায় সীমাবদ্ধ থাকবে? এখানেই ভারতের নিরাপত্তা আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ।

সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো, তালেবানদের পুনরুত্থান কী কাশ্মীরে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর স্থাপিত শান্তি ও উন্নয়নের উপর কালো মেঘ হয়ে ধরা দিবে?

মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করার পর থেকেই পাকিস্তানের গোপন এবং প্রত্যক্ষ সমর্থনে ভূখন্ডটি থেকে আশরাফ ঘানির সরকারকে সরিয়ে পুনরায় ক্ষমতা দখলে নেয়ার লড়াইয়ে মেতে উঠে আফগান তালেবান। অবশেষে প্রায় বিনা বাঁধায় কাবুল দখল এবং সরকার গঠনেও সক্ষম হয় তাঁরা। ফলস্বরূপ গোটা অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক ভূ-রাজনৈতিক খেলার।

ইতোমধ্যে ভারতীয় শীর্ষ কূটনীতিকগণ এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আইএসআই এবং আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সাথে তালেবানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

এ আশঙ্কার পালে হাওয়া দিচ্ছে জঙ্গী গোষ্ঠী গুলোর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য ও কর্মকান্ড। গত ০২ সেপ্টেম্বর তালেবানের মুখপাত্র সুহেল শাহীন বিবিসিকে বলেন, “মুসলিম হিসেবে আমাদেরও কাশ্মীর, ভারত কিংবা অন্য কোনো রাষ্ট্রে মুসলিমদের জন্য আওয়াজ তোলার অধিকার রয়েছে।”

এর আগে তালেবান আফগান বিজয়ের পর সংগঠনটিকে অভিনন্দন জানায় শীর্ষ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদা। সে অভিনন্দন বার্তায় কাশ্মীর, সোমালিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্য ইসলামী ভূখণ্ড মুক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সংগঠনটি।

এছাড়াও, তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পরপরই আফগানিস্তানে আটক নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট, লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জৈশ-ই-মোহাম্মদের শীর্ষ সকল সন্ত্রাসীদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দেয়। এটি ব্যাপকভাবে তালেবানের সন্ত্রাসী মনোভাবকে চিহ্নিত করে।

গত সপ্তাহেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছিলেন, আফগানিস্তানে ভারতের প্রথম লক্ষ্য দেশটির ভূখন্ড যেনো সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য ব্যবহৃত না হয়। এছাড়াও, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কীভাবে আটকানো যায়, তা নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ ইতোপূর্বেও ব্যক্ত করেছিলেন চীফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত।

তাই সর্বোপরি কাশ্মীরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর প্রভাব বাড়তে পারে বলে ব্যাপকভাবে আশঙ্কা করছে ভারতীয় নিরাপত্তা এজেন্সি গুলো।

সকল মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান

ঐতিহাসিকভাবেই আফগানিস্তান নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে। উভয় দেশই স্বীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা বিবেচনায় আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছে। তাই স্বভাবতই যখনই আফগানিস্তানে ভারতীয় পছন্দের সরকার আসীন থেকেছে, পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। মুদ্রার উল্টোপিঠে পাক সরকার ঘনিষ্ঠ নেতৃত্ব যখনই আফগান মসনদে আসীন হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিদ্রাহীন বিস্তর রাত পাড় করেছে।

তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের মিত্রতা বর্তমানে একটি উন্মুক্ত গোপন বিষয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার মিডিয়ার সামনে তালেবানের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তালেবানের বিজয়কে দাসত্বের শৃঙ্খল মুক্ত হওয়া হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি।

এছাড়াও, সম্প্রতি পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দলের নেতা নীলম ইরশাদ শেখ বলেন, “তালেবানরা ভারত থেকে কাশ্মীরকে মুক্ত করতে আমাদের সাহায্য করবে।” অন্য আরেক অডিও বার্তায় পাক-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিযব-উল-মুজাহিদ্দিনের প্রধান সৈয়দ সালাহউদ্দিন তালেবানের বিজয়কে ‘অসাধারণ এবং ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

আর্থিকভাবে পঙ্গু পাকিস্তানের জন্য ভারতের সঙ্গে প্রচলিত যুদ্ধ পরিচালনা ব্যাপক ব্যয়বহুল হবে। তাই স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গী রাষ্ট্রটি ভারতে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রক্সি যুদ্ধ চালাতে সচেষ্ট হবে বলে ধারণা করা যায়।

আফগানিস্তান কি সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রে পরিণত হবে?

ইতোমধ্যে তালেবান নেতৃত্বাধীন দেশটিতে ঘাঁটি গড়েছে আল কায়েদা, হাক্কানি নেটওয়ার্ক, জইশ, লস্কর এবং আইএসএস। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের পরবর্তী কেন্দ্র কী আফগানিস্তান?

আফগানিস্তানের সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলী মোহাম্মদের কথায়, “আফগানিস্তান এখন সন্ত্রাসীদের, মৌলবাদীদের এবং চরমপন্থীদের লাস ভেগাসে পরিণত হয়েছে। এটি বিশ্বজুড়ে অন্যান্য চরমপন্থীদের আফগানিস্তানে আসার পথ সুগম করছে।”

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি) এসপি বৈদ সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আইএসআই নিঃসন্দেহে তালেবানের কাছে সহায়তা চাইবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে পরিণতি দেয়ার লক্ষ্যে।”

তালেবানদের ‘সরকার গঠনের’ উপর পাক স্ট্যাম্প

তালেবানের প্রথম নেতা এবং প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব, যিনি ১৯৯৯ সালের IC-814 ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাকারী ছিলেন, তিনি এখন আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সে ঘটনার আদ্যোপান্ত আমরা জানি। সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর সঙ্গে সেবার ভারতের দহরম মহরমে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পাশে দাঁড়ায় পাকিস্তানের আইএসআই।

এবারও আফগানিস্তানে তালেবান সরকার গঠনের পূর্বে কয়েকদিন কাবুলে অবস্থান করেন আইএসআই প্রধান। তাঁর চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই সরকার গঠন করে তালেবান। সরকার গঠনের দিন হিসেবেও ৯/১১ এর দিনকে চূড়ান্ত করে তাঁরা। তাই বলাই যায়, তালেবান সরকার গঠনের উপর স্ট্যাম্প রয়েছে পাকিস্তানেরই।

দক্ষিণ আফগানিস্তানের কাশ্মীর উপত্যকার কাছে বিমানঘাঁটি করেছে পাকিস্তান

সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান আফগানিস্তানের কাছে বেলুচিস্তানে এক বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছে। অত্র অঞ্চলে নজরদারি করার জন্যে এটি একটি বিশাল পদক্ষেপ হিসেবেই মনে করছে বোদ্ধামহল।

এছাড়াও, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোট এবং কোটলিতে ইতোপূর্বে বন্ধ হওয়া বেশ কিছু বিমান ঘাঁটি সক্রিয় করেছে পাকিস্তান। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সংস্থা গুলোও সার্বক্ষণিকভাবে নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগুলোর পর্যবেক্ষণ করছে। কিন্তু দুর্ঘটনার যেকোনো সময়ই হানা দিতে পারে।

চীন ফ্যাক্টর

তালেবানের পুনরুত্থানে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে চীন। তালেবান নেতৃত্বকে ইতোমধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে পাকিস্তানের মিত্র চীন। খুব স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট বিদায়ের পর দেশটিতে প্রসার জমাতে চাইবে পাকিস্তান এবং চীন নেতৃত্ব। ইতোমধ্যে সরকার পরিচালনার জন্য তালেবান নেতৃত্বকে কয়েক মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ দিয়েছে কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রটি।

একই সঙ্গে, আফগানিস্তানে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর সম্প্রসারণের দিকেও নজর দিচ্ছে চীন। সে লক্ষ্যে প্রকল্পটিতে প্রায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দও বৃদ্ধি করেছে তাঁরা। আফগানিস্তানের বৃহৎ খনিজ সম্পদ কাজে লাগানোর আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে দেশটির। তবে এখানেই আসলে সব সন্দেহের শুরু!

তাছাড়া, চীনের উচ্চাভিলাষী বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে আফগানিস্তানকে যুক্ত করতে পারলে অঞ্চল জুড়ে ব্যাপক ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে সক্ষম হবে বেইজিং।

তালেবান নেতৃত্বও চীনকে নিজেদের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং পরোপকারী বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করছে। রাষ্ট্র চালানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ তালেবানের নেই। বন্ধ রয়েছে পশ্চিমা অনুদান। তাই স্বাভাবিকভাবেই চীন এখানে তাঁদের কার্যকর মিত্র।

আর চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ এবং লাদাখ অঞ্চলে চীনের দাবি অনেক পুরোনো বিষয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই অঞ্চলটিতে তালেবান সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে চীন। ফলস্বরূপ, প্রক্সি যুদ্ধে পাকিস্তানের পাশাপাশি চীনের তরফেও হুমকির সম্মুখীন ভারত।

কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা

সাম্প্রতিক বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কাশ্মীরে আবারও বিদেশী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। দ্য হিন্দু পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী উত্তর কাশ্মীরে ৪০-৫০ জন বিদেশী এবং ১১ জন স্থানীয় সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে। গত এক দশকে প্রথমবারের মতো বিদেশি সন্ত্রাসীরা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চেয়ে বেশি বলে কোনো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলো। এটাও লক্ষণীয় যে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দক্ষিণ থেকে উত্তর কাশ্মীরে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

এসব সন্ত্রাসীদের মধ্যে আইএস-খোরাসানের সদস্যরা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এদের বেশ পুরোনো হাত রয়েছে। তাই বেশ ধাক্কা খাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের শান্তির ঘুম।

উদ্বিগ্ন বিশ্ব সম্প্রদায়

আফগানিস্তানে তালেবান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। এছাড়াও, সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, যুক্তরাজ্যের সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এমআই)) প্রধান রিচার্ড মুর এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব নিকোলাই পাত্রুশেভ পৃথক প্রেক্ষাপটে ভারত সফরকালে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের প্রভাব বৃদ্ধিতে।

এছাড়াও, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধানদের সমন্বয়ে বৈঠক আয়োজন করেছে ভারত। জাতিসংঘেও বেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়েছে মোদী সরকার। নারীর ক্ষমতায়ন রোধ সহ বেশ কিছু কারণে বিশ্বজুড়ে সচেতন নাগরিকেরা উদ্বেগ জানিয়েছে তালেবান নেতৃত্ব ক্ষমতা দখলে নেয়ায়। নিজেদের নাগরিক সরিয়ে নিয়েছে বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্র।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান দৃঢ় করতে নিরাপত্তা পরিষদে ইতোমধ্যে একটি রেজুলেশনও পাশ করেছিলো ভারত। তবে, জঙ্গী গোষ্ঠীটির পেছনে কয়েকটি বড় প্রভাবশালী রাষ্ট্রের স্বার্থের হাত জড়িয়ে থাকায় এসব উদ্যোগ এখনও সাফল্যের মুখ দেখেনি।

তাই এখন এটাই দেখতে অপেক্ষা করতে হবে যে, তালেবান নেতৃত্ব আদৌ দেশ পরিচালনায় মনযোগী হবে, নাকি কাশ্মীরে মেঘ হিসেবে আবির্ভূত হবে?

লেখক: কৌশলগত কূটনীতি এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। (প্রকাশিত লেখনী সম্পূর্ণই তাঁর নিজস্ব অভিমত)

অনুবাদ: ফাহিম আহম্মেদ মন্ডল, বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইন্ডিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক