Notice: Undefined index: custom_code in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/header.php on line 27
Dhaka 6:22 pm, Sunday, 1 October 2023

  • Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/page/header_design_two.php on line 68

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে সবার আগে সম্মান

  • Reporter Name
  • Update Time : 06:46:24 pm, Thursday, 25 March 2021
  • 10 Time View

সাদিয়া রহমান: লেখনীর শুরুতেই পাঠক মহলের সবাইকে জানাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ তম বর্ষ, তথা সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। গৌরবময় পথচলার বিগত ৫০ টি বছরে নানা রকমের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আশা-হতাশা; সর্বোপরি জাতীয় লজ্জা ও গৌরবের উভয় রূপই আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। যে চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলার আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সেই স্বপ্ন কতোটা পূরণ হয়েছে, তা বোদ্ধারা নিশ্চয়ই বিশ্লেষণ করছেন। এই কঠিন হিসেব কষতে পারার মতো মেধা-মনন কোনোটিই আমার নেই। তাই কঠিন সব বিশ্লেষণেও আমি যাচ্ছি না। আজকের এই লিখাটি মূলত লিখতে চলেছি- তরুণ প্রজন্মের একজন সচেতন প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীনতা শব্দটি আমার নিকট কী মাইনে রাখে, আমি স্বাধীনতা বলতে কোন জিনিসটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই, সেটিই তুলে ধরতে।

স্রষ্টার সব সৃষ্টি-ই জন্মগতভাবে স্বাধীন। কিন্তু জীবনে চলার প্রতিটি ধাপেই আমাদেরকে পরাধীনতা বরণ করে নিতে হয়! তবুও স্বাধীনতা আমাদের পরম আরাধ্য, প্রার্থিত, কাঙ্ক্ষিত! ভৌগলিকভাবে স্বাধীন ভূখণ্ডে বসবাস করলেই কেবল স্বাধীন হওয়া যায় না! স্বাধীনতার ব্যাপ্তি, বিস্তৃতি এবং গভীরতা শব্দটির অর্থের চেয়েও ব্যাপক।

আজ যখন, “আমার কাছে স্বাধীনতা কী?” -এ সম্পর্কে লিখতে বসেছি, তখন শুরুতেই মনে পড়ছে ভবানী প্রসাদ মজুমদারের দুটো পঙক্তি, “স্বাধীনতার সঠিক মানে কজন স্বজন সত্যি জানে, স্বাধীনতার সংজ্ঞা খুঁজো শেকল ছেঁড়া পাখির গানে!”

লেখকের অনুকরণেই বলবো, আমার কাছেও স্বাধীনতা মানে, মুক্ত আকাশে সানন্দে উড়ে বেড়ানো পাখির সেই কিচিরমিচির শব্দ, যা তরুনীদের গলায় গান হয়ে ঝড়ে পরে! গৃহিনীর মুখের হাসি হয়ে ফুটে উঠে! শ্রমজীবী নারীর সম্মানে স্থির হয়ে যায়!

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে, সবার আগে সম্মান। একজন নারী হিসেবে নিজেকে এবং সকল নারীকে যোগ্যতা অনুসারে সম্মানের উচ্চতম আসনে বসতে দেখাতেই আমার স্বাধীনতা! স্বাধীনতা মানে শিশুর প্রতি আত্নীয় ও প্রতিবেশির সঠিক আচরন, কিশোরীর স্বাস্থ্য সমস্যায় লজ্জিত না হয়ে উঠা, তরুনীর ধর্ষকের ভয়ে আঁতকে না উঠা!

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে, রাতে ঘুটঘুটে কালোর মাঝে জ্বলে উঠা ল্যাম্পপোস্টের ঐ আলোর ভাগ নেয়ার সুযোগ! স্বাধীনতা যদি থাকে তবে ঐ আলোর ভাগ সকল পুরুষের মতোনই নারীরও আছে!

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে, রাত দশটায় বাস থেকে নেমে একা রাস্তায় হেঁটে আসতে কোনো নারী ভয় পাবেনা। স্বাধীনতা মানে মুক্ত মতের নিশ্চয়তা! স্বাধীনতা হলো সেই প্রশান্তি যা আমাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পথ বাতলে দিবে।

স্বাধীনতা মানে নতুনত্বের স্বাদ, সুযোগ পাওয়ার অধিকার। যে সকল সঠিক এবং ভিন্নরকম কাজগুলো আমি করতে চাই, সেগুলো স্বস্তিতে, ঝামেলা বিহীনভাবে করতে পারাই আমার কাছে স্বাধীনতা! আমাকে যেনো দমে না যেতে হয় কোনো অন্যায়ের কাছে, যেনো থমকে না দাঁড়াতে হয় দুর্নীতির কাছে!

স্বাধীনতা নিয়ে লিখবো, অথচ আমার দেশের গরীব খেটে খাওয়া মানুষের কথা মনে আসবেনা, তা হয়না! আমার দেশ আজ স্বাধীন, গর্বভরে বলতে পারি আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক, এটি সত্যি হয়েছিলো এই মানুষগুলোর জন্যেই! কিন্তু আজও তাঁরা তাঁদের পূর্ণ অধিকার পায়নি।

করোনাকালের লকডাউনে আমরা দেখেছি মানুষের দুঃখ দুর্দশার রূপ! শুনেছি ক্ষুধার যন্ত্রণা মরণ যন্ত্রনার চেয়েও কষ্টের! ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে, অন্নের খোঁজে যখন আমার মানুষেরা লকডাউনের স্বাস্থ্যবিধি ভাঙ্গে, অনুদান, প্রণোদনার টাকা যখন আমার নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই লুটমার করে খায়, তখন আমাকে বুঝতে হবে স্বাধীনতার প্রাপ্তি আজও বহু ক্রোশ দূরের পথ!

কথা প্রসঙ্গেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর একটি স্মরণীয় উক্তি মনে পড়ে গেলো! তিনি বলেছিলেন, “এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে“। সত্যিই তো, স্বাধীনতা মানে যোগ্যতার ভিত্তিতে সার্বিক সাম্য, সার্বিক উন্নয়ন।

হ্যা, আমাদের দেশ ধীরে ধীরে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত হওয়ার পথে ধাবিত হচ্ছে। প্রতি বছরই আমাদের জিডিপির উর্ধ্বমুখী। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র, নিরসন হচ্ছে বেকারত্বের। সৃষ্টি হচ্ছে নানান জাতীয় মাইলফলক! কিন্তু তবুও কোথাও যেনো একটা খামতি রয়ে যাচ্ছে! তা হচ্ছে আমাদের মানসিকতার উতকর্ষ সাধিত না হওয়া!

আমাদের মানসিকতা আমাদেরকে স্বাধীনতার পূর্ণ রস উপভোগ করতে দেয়না! এই স্বাধীনতা কেমন যেনো বনসাই গাছের মতো মনে হয়! বনসাই এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হবেনা, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার! কিন্তু এই অপার সুন্দরের পেছনেই রয়েছে লোহায় বেঁধে রেখে বাড়তে না দেয়া এক বৃক্ষের করূন কান্নার ইতিহাস!

বরেণ্য কবি হেলাল হাফিজ স্বাধীনতা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, “কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে, সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।”

এই স্বাধীনতা আজও অর্জিত হয়নি। আজও আমার দেশ অনিয়ম আর অন্যায়ের বাঁধভাঙ্গা প্রশ্রয়দাতা! যেদিন এখানে থাকবেনা কোনো অন্যায়, যেদিন থাকবেনা কোনো জুলুম, সেদিন অর্জিত হবে প্রকৃত স্বাধীনতা। আর এই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের মূল পাথেয় হবে মনুষ্যত্বের বিকাশ! মানসিকতার উতকর্ষ! রুচিশীলতার আবির্ভাব!

কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন! বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার তাঁরই আছে, যে স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে জানে!” সত্যিই তো, আমি যদি স্বাধীনতার মর্যাদাই না রক্ষা করতে পারলাম, তাহলে আমার স্বাধীনতা ভোগের কোনো অধিকারও নেই!

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমরা তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল এক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। তাই আমাদের স্বাধীনতার মর্যাদাকে রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে স্বাধীনতার প্রকৃত মানে বুঝতে হবে। স্বাধীনতাকে বুকে ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে। স্বাধীনতা ভোগ করার পাশাপাশি স্বাধীনতা দিতে জানতে হবে! পরস্পরকে সম্মান করতে হবে! সর্বোপরি, একটি বিভেদহীন জাতি হয়ে উঠতে হবে। তবেই পূর্ণতা পাবে আমার স্বাধীনতা।

লেখক: সাদিয়া রহমান, শিক্ষার্থী, এগ্রিকালচার, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

Tag :

Notice: Trying to access array offset on value of type int in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/template-parts/common/single_two.php on line 177

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

Notice: Undefined index: footer_custom_code in /home/nabajugc/public_html/wp-content/themes/NewsFlash-Pro/footer.php on line 87

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে সবার আগে সম্মান

Update Time : 06:46:24 pm, Thursday, 25 March 2021

সাদিয়া রহমান: লেখনীর শুরুতেই পাঠক মহলের সবাইকে জানাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ তম বর্ষ, তথা সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। গৌরবময় পথচলার বিগত ৫০ টি বছরে নানা রকমের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, আশা-হতাশা; সর্বোপরি জাতীয় লজ্জা ও গৌরবের উভয় রূপই আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। যে চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলার আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিলেন, সেই স্বপ্ন কতোটা পূরণ হয়েছে, তা বোদ্ধারা নিশ্চয়ই বিশ্লেষণ করছেন। এই কঠিন হিসেব কষতে পারার মতো মেধা-মনন কোনোটিই আমার নেই। তাই কঠিন সব বিশ্লেষণেও আমি যাচ্ছি না। আজকের এই লিখাটি মূলত লিখতে চলেছি- তরুণ প্রজন্মের একজন সচেতন প্রতিনিধি হিসেবে স্বাধীনতা শব্দটি আমার নিকট কী মাইনে রাখে, আমি স্বাধীনতা বলতে কোন জিনিসটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই, সেটিই তুলে ধরতে।

স্রষ্টার সব সৃষ্টি-ই জন্মগতভাবে স্বাধীন। কিন্তু জীবনে চলার প্রতিটি ধাপেই আমাদেরকে পরাধীনতা বরণ করে নিতে হয়! তবুও স্বাধীনতা আমাদের পরম আরাধ্য, প্রার্থিত, কাঙ্ক্ষিত! ভৌগলিকভাবে স্বাধীন ভূখণ্ডে বসবাস করলেই কেবল স্বাধীন হওয়া যায় না! স্বাধীনতার ব্যাপ্তি, বিস্তৃতি এবং গভীরতা শব্দটির অর্থের চেয়েও ব্যাপক।

আজ যখন, “আমার কাছে স্বাধীনতা কী?” -এ সম্পর্কে লিখতে বসেছি, তখন শুরুতেই মনে পড়ছে ভবানী প্রসাদ মজুমদারের দুটো পঙক্তি, “স্বাধীনতার সঠিক মানে কজন স্বজন সত্যি জানে, স্বাধীনতার সংজ্ঞা খুঁজো শেকল ছেঁড়া পাখির গানে!”

লেখকের অনুকরণেই বলবো, আমার কাছেও স্বাধীনতা মানে, মুক্ত আকাশে সানন্দে উড়ে বেড়ানো পাখির সেই কিচিরমিচির শব্দ, যা তরুনীদের গলায় গান হয়ে ঝড়ে পরে! গৃহিনীর মুখের হাসি হয়ে ফুটে উঠে! শ্রমজীবী নারীর সম্মানে স্থির হয়ে যায়!

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে, সবার আগে সম্মান। একজন নারী হিসেবে নিজেকে এবং সকল নারীকে যোগ্যতা অনুসারে সম্মানের উচ্চতম আসনে বসতে দেখাতেই আমার স্বাধীনতা! স্বাধীনতা মানে শিশুর প্রতি আত্নীয় ও প্রতিবেশির সঠিক আচরন, কিশোরীর স্বাস্থ্য সমস্যায় লজ্জিত না হয়ে উঠা, তরুনীর ধর্ষকের ভয়ে আঁতকে না উঠা!

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে, রাতে ঘুটঘুটে কালোর মাঝে জ্বলে উঠা ল্যাম্পপোস্টের ঐ আলোর ভাগ নেয়ার সুযোগ! স্বাধীনতা যদি থাকে তবে ঐ আলোর ভাগ সকল পুরুষের মতোনই নারীরও আছে!

আমার কাছে স্বাধীনতা মানে, রাত দশটায় বাস থেকে নেমে একা রাস্তায় হেঁটে আসতে কোনো নারী ভয় পাবেনা। স্বাধীনতা মানে মুক্ত মতের নিশ্চয়তা! স্বাধীনতা হলো সেই প্রশান্তি যা আমাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির পথ বাতলে দিবে।

স্বাধীনতা মানে নতুনত্বের স্বাদ, সুযোগ পাওয়ার অধিকার। যে সকল সঠিক এবং ভিন্নরকম কাজগুলো আমি করতে চাই, সেগুলো স্বস্তিতে, ঝামেলা বিহীনভাবে করতে পারাই আমার কাছে স্বাধীনতা! আমাকে যেনো দমে না যেতে হয় কোনো অন্যায়ের কাছে, যেনো থমকে না দাঁড়াতে হয় দুর্নীতির কাছে!

স্বাধীনতা নিয়ে লিখবো, অথচ আমার দেশের গরীব খেটে খাওয়া মানুষের কথা মনে আসবেনা, তা হয়না! আমার দেশ আজ স্বাধীন, গর্বভরে বলতে পারি আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক, এটি সত্যি হয়েছিলো এই মানুষগুলোর জন্যেই! কিন্তু আজও তাঁরা তাঁদের পূর্ণ অধিকার পায়নি।

করোনাকালের লকডাউনে আমরা দেখেছি মানুষের দুঃখ দুর্দশার রূপ! শুনেছি ক্ষুধার যন্ত্রণা মরণ যন্ত্রনার চেয়েও কষ্টের! ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে, অন্নের খোঁজে যখন আমার মানুষেরা লকডাউনের স্বাস্থ্যবিধি ভাঙ্গে, অনুদান, প্রণোদনার টাকা যখন আমার নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই লুটমার করে খায়, তখন আমাকে বুঝতে হবে স্বাধীনতার প্রাপ্তি আজও বহু ক্রোশ দূরের পথ!

কথা প্রসঙ্গেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর একটি স্মরণীয় উক্তি মনে পড়ে গেলো! তিনি বলেছিলেন, “এই স্বাধীনতা তখনই আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে“। সত্যিই তো, স্বাধীনতা মানে যোগ্যতার ভিত্তিতে সার্বিক সাম্য, সার্বিক উন্নয়ন।

হ্যা, আমাদের দেশ ধীরে ধীরে উন্নয়নশীল থেকে উন্নত হওয়ার পথে ধাবিত হচ্ছে। প্রতি বছরই আমাদের জিডিপির উর্ধ্বমুখী। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র, নিরসন হচ্ছে বেকারত্বের। সৃষ্টি হচ্ছে নানান জাতীয় মাইলফলক! কিন্তু তবুও কোথাও যেনো একটা খামতি রয়ে যাচ্ছে! তা হচ্ছে আমাদের মানসিকতার উতকর্ষ সাধিত না হওয়া!

আমাদের মানসিকতা আমাদেরকে স্বাধীনতার পূর্ণ রস উপভোগ করতে দেয়না! এই স্বাধীনতা কেমন যেনো বনসাই গাছের মতো মনে হয়! বনসাই এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হবেনা, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার! কিন্তু এই অপার সুন্দরের পেছনেই রয়েছে লোহায় বেঁধে রেখে বাড়তে না দেয়া এক বৃক্ষের করূন কান্নার ইতিহাস!

বরেণ্য কবি হেলাল হাফিজ স্বাধীনতা প্রসঙ্গে লিখেছিলেন, “কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে, সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।”

এই স্বাধীনতা আজও অর্জিত হয়নি। আজও আমার দেশ অনিয়ম আর অন্যায়ের বাঁধভাঙ্গা প্রশ্রয়দাতা! যেদিন এখানে থাকবেনা কোনো অন্যায়, যেদিন থাকবেনা কোনো জুলুম, সেদিন অর্জিত হবে প্রকৃত স্বাধীনতা। আর এই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের মূল পাথেয় হবে মনুষ্যত্বের বিকাশ! মানসিকতার উতকর্ষ! রুচিশীলতার আবির্ভাব!

কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন! বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “স্বাধীনতা ভোগ করার অধিকার তাঁরই আছে, যে স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করতে জানে!” সত্যিই তো, আমি যদি স্বাধীনতার মর্যাদাই না রক্ষা করতে পারলাম, তাহলে আমার স্বাধীনতা ভোগের কোনো অধিকারও নেই!

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, আমরা তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল এক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। তাই আমাদের স্বাধীনতার মর্যাদাকে রক্ষা করতে হলে আমাদেরকে স্বাধীনতার প্রকৃত মানে বুঝতে হবে। স্বাধীনতাকে বুকে ধারণ করতে হবে, লালন করতে হবে। স্বাধীনতা ভোগ করার পাশাপাশি স্বাধীনতা দিতে জানতে হবে! পরস্পরকে সম্মান করতে হবে! সর্বোপরি, একটি বিভেদহীন জাতি হয়ে উঠতে হবে। তবেই পূর্ণতা পাবে আমার স্বাধীনতা।

লেখক: সাদিয়া রহমান, শিক্ষার্থী, এগ্রিকালচার, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়