১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

ক্যাম্পাস খোলার পরপরই জাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি: লেখক

অন্তঃকোন্দল, আভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক বরাদ্দে ভাগ বসানোর অভিযোগ, কমিটিতে শিবিরের স্থান, হল কমিটি দিতে না পারা, গ্রুপিং, র‍্যাগিং, সাধারণ সম্পাদকের স্থায়ী ভাবে ক্যাম্পাস ত্যাগ, পরবর্তীতে সভাপতিকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং একটি হল ছাড়া বাকি ছয় হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচী পালনসহ নানা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক কর্মকান্ডে গণমাধ্যমের আলোচনা ও সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

গত ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো জুয়েল রানাকে সভাপতি এবং আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছর মেয়াদী জাবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল ২১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। কিন্তু এক বছরের কমিটির বর্তমান বয়স চার বছর হতে চলছে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ জাবি শাখা ছাত্রলীগ কমিটির অনেক নেতাই ইতোমধ্যে হয়েছেন রাজনীতি বিমুখ; কেউবা নিয়েছেন চাকরী, কেউ হয়েছেন সংসারী, আবার কেউ হয়েছেন মাইনাস ফর্মূলার বলি।

অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু আর্দশকে ধারণ করে নতুন কমিটিতে নেতৃত্বে আশায় করোনা মহামারির সময়েও ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে আশে পাশের এলাকা গুলোতে অবস্থান করছেন এবং নিজের সাধ্য মতো সহযোগীর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, পালন করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচী। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে আজ বহুদিন!

এদিকে, ৪১ ব্যাচ (২০১১-১২ সেশন) এবং ৪২ ব্যাচের (২০১২-১৩ সেশন) অধিকাংশ নেতার্কমীরা তাদের শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেছে। হল কমিটি না দেয়ায় ছাত্রলীগের ত্যাগী অনেককেই কোন ছাত্রলীগের পদবী ছাড়া তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করতে হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তাই চরম অস্থিতিশীল ও উদ্বীগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীগণ।

নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ এবং অভিযোগ গুলোকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সারাদেশে নিন্দিত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। বিগত এক বছর সময়কালে বেশ কয়েকবারই কাউন্সিল দেয়া সহ কমিটি বিলুপ্ত করণ এবং নতুন কমিটি প্রদানের অঙ্গীকার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য সুতোর টানে বরাবরই ঝুলে গিয়েছে জাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ভাগ্য।

এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই শাখাতে নতুন কমিটি প্রদানের ব্যাপারে কী ভাবছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ? এ ব্যাপারে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি ইউসুফ জামিল এর সাথে কথা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের। প্রতিনিধির সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপচারিতায় কথোপকথনটি নিচে উদ্ধৃত করা হলো-

প্রতিনিধিঃ দাদা, কেমন আছেন?

লেখকঃ জ্বী ভালো। আপনি ভালো আছেন??

প্রতিনিধিঃ জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি। দাদা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে আপনি সবই অবগত রয়েছেন। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে ছাড়াই ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছেন। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ করেছে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতাকর্মীগণ। এই আয়োজনটি সম্পূর্ণই দুই শীর্ষ নেতা ছাড়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি প্রণয়নের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে?

লেখকঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের টপ প্রায়োরিটিতে রয়েছে। সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাঙ্গন খুলে দেয়ার পর প্রথমদিকে যে কমিটি গুলো আমরা প্রণয়ন করবো, তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম শীর্ষে রয়েছে।

প্রতিনিধিঃ তাহলে আমরা কী বলতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার এক-দু মাসের মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের কমিটি হতে চলেছে?

লেখকঃ হ্যা।

প্রতিনিধিঃ এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন অবধারিত ভাবে চলে আসছে, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, এমন কাউকে কী নেতৃত্বে আনা হবে? ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ নং ধারাতেও বলা হয়েছে যে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত যেকোনো বিদ্যাপীঠের ‘নিয়মিত’ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারবেন এবং তাঁর বয়স হতে হবে অনুর্ধ্ব ২৯। আমরা ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে অবস্থানরত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি যে তাঁরাও চাইছেন, ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, অর্থাৎ অনার্স-মাস্টার্স সবই ইতোমধ্যে শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষার পাঠ চুকিয়েছেন, এমন কেউ শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে না আসুক। এ বিষয়টি আপনি কি ভাবে দেখছেন…?

লেখকঃ ছাত্রলীগের নিজস্ব গঠনতন্ত্র রয়েছে। গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে সব উল্লেখ করা রয়েছে যে ছাত্রত্ব শেষ এবং বয়স উত্তীর্ণ, এমন কাউকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনা যাবেনা এবং তাঁরা কর্মী হিসেবেও ছাত্রলীগ করতে পারবেন না। তাই অছাত্র কাউকে ছাত্রলীগের দায়িত্বে আনার কোনো সুযোগ নেই।

প্রতিনিধিঃ জাবি ক্যাম্পাসের ৪১ এবং ৪২ তম আবর্তনের কিছু ছাড়া প্রায় সকল শিক্ষার্থীরই ইতোমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। কিন্তু তাঁরা রাজনীতিতে এখনও এক্টিভ ভূমিকা পালন করছে, হলে অবস্থান করছে এবং সব রকমের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশেরেই ছাত্রত্ব নেই। সেক্ষেত্রে কী আমরা ধরে নিতে পারি ৪৩ এবং ৪৪ ব্যাচের যারা বর্তমানে ছাত্রলীগ নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকে কেউ নেতৃত্বে আসতে চলেছেন?

লেখকঃ দেখুন, ছাত্রলীগের অসংখ্য ক্যাম্পাস শাখা রয়েছে এবং ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের কমিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত নেতাদের শিক্ষাবর্ষ লক্ষ্য করি। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচের আলাদা আলাদা হিসেব রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরের ক্ষেত্রে ব্যাচের যা হিসেব রয়েছে, তা একান্তই তাঁদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা আমাদের কমিটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করবো তাঁদের সেশন, ছাত্রত্বের বর্তমান অবস্থান এবং গঠনতন্ত্র অনুসারে তাঁরা যোগ্য কী না। এক্ষেত্রে ত্যাগী, মেধাবী এবং যোগ্যদেরকে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও দায়িত্বে নিয়ে আসা যেতে পারে।

প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যে অনেক নেতাই রয়েছেন যারা সাংগঠনিকভাবে মেধাবী এবং দক্ষতার প্রমাণ ইতোমধ্যে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যাপারে আরও কী কী বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে পারে ?

লেখকঃ আমরা ক্যাম্পাস স্বাভাবিক অবস্থানে ফেরার পরই কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কমিটি করে দেবো। তাই এক্ষেত্রে কর্মীদের মতের মূল্যায়ন পাবে। একই সঙ্গে যারা ক্যাম্পাসের সাবেক ছাত্রনেতা রয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, বর্তমান কমিটির যারা গুরুদায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের মতামতকেও গুরুত্ব প্রদান করা হবে। সর্বোপরি, নতুন কমিটির ক্ষেত্রে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী যারা, তাঁদের মধ্য হতে সার্বিক ছাত্রত্বের যোগ্যতার বৈধ প্রমাণ দিয়েই কমিটি প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে একটি সুন্দর সমন্বয়ের চেষ্টা করবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

প্রতিনিধিঃ বর্তমান কমিটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমান কমিটি কী তাহলে দাদা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে?

লেখকঃ না, প্রতিটি সংগঠনেরই সাংগঠনিক কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবার পরই শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন ডাকা হবে। সেই সম্মেলনের দিন শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হবে। তার আগে নয়। সম্মেলনের মাধ্যমেই আমরা নতুন কমিটি ঘোষণা করবো। আর তা হবে ক্যাম্পাস খোলার দু মাসের মাঝেই।

প্রতিনিধিঃ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে দাদা, আমাকে সময় প্রদানের জন্য।

লেখকঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

ট্যাগ:
জনপ্রিয়

ক্যাম্পাস খোলার পরপরই জাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি: লেখক

প্রকাশ: ০৫:৩৫:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০২০

অন্তঃকোন্দল, আভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ, উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক বরাদ্দে ভাগ বসানোর অভিযোগ, কমিটিতে শিবিরের স্থান, হল কমিটি দিতে না পারা, গ্রুপিং, র‍্যাগিং, সাধারণ সম্পাদকের স্থায়ী ভাবে ক্যাম্পাস ত্যাগ, পরবর্তীতে সভাপতিকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং একটি হল ছাড়া বাকি ছয় হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচী পালনসহ নানা ইতিবাচক এবং নেতিবাচক কর্মকান্ডে গণমাধ্যমের আলোচনা ও সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

গত ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো জুয়েল রানাকে সভাপতি এবং আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছর মেয়াদী জাবি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল ২১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়। কিন্তু এক বছরের কমিটির বর্তমান বয়স চার বছর হতে চলছে।

মেয়াদ উত্তীর্ণ জাবি শাখা ছাত্রলীগ কমিটির অনেক নেতাই ইতোমধ্যে হয়েছেন রাজনীতি বিমুখ; কেউবা নিয়েছেন চাকরী, কেউ হয়েছেন সংসারী, আবার কেউ হয়েছেন মাইনাস ফর্মূলার বলি।

অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু আর্দশকে ধারণ করে নতুন কমিটিতে নেতৃত্বে আশায় করোনা মহামারির সময়েও ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে আশে পাশের এলাকা গুলোতে অবস্থান করছেন এবং নিজের সাধ্য মতো সহযোগীর হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, পালন করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচী। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে আজ বহুদিন!

এদিকে, ৪১ ব্যাচ (২০১১-১২ সেশন) এবং ৪২ ব্যাচের (২০১২-১৩ সেশন) অধিকাংশ নেতার্কমীরা তাদের শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেছে। হল কমিটি না দেয়ায় ছাত্রলীগের ত্যাগী অনেককেই কোন ছাত্রলীগের পদবী ছাড়া তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করতে হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে তাই চরম অস্থিতিশীল ও উদ্বীগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীগণ।

নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ এবং অভিযোগ গুলোকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সারাদেশে নিন্দিত হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। বিগত এক বছর সময়কালে বেশ কয়েকবারই কাউন্সিল দেয়া সহ কমিটি বিলুপ্ত করণ এবং নতুন কমিটি প্রদানের অঙ্গীকার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য সুতোর টানে বরাবরই ঝুলে গিয়েছে জাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটির ভাগ্য।

এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই শাখাতে নতুন কমিটি প্রদানের ব্যাপারে কী ভাবছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ? এ ব্যাপারে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি ইউসুফ জামিল এর সাথে কথা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যের। প্রতিনিধির সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপচারিতায় কথোপকথনটি নিচে উদ্ধৃত করা হলো-

প্রতিনিধিঃ দাদা, কেমন আছেন?

লেখকঃ জ্বী ভালো। আপনি ভালো আছেন??

প্রতিনিধিঃ জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি। দাদা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিদ্যমান অবস্থা সম্পর্কে আপনি সবই অবগত রয়েছেন। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে ছাড়াই ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছেন। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে বৃক্ষরোপণ করেছে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের নেতাকর্মীগণ। এই আয়োজনটি সম্পূর্ণই দুই শীর্ষ নেতা ছাড়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এমতাবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নতুন কমিটি প্রণয়নের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত আসতে পারে?

লেখকঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের টপ প্রায়োরিটিতে রয়েছে। সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাঙ্গন খুলে দেয়ার পর প্রথমদিকে যে কমিটি গুলো আমরা প্রণয়ন করবো, তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম শীর্ষে রয়েছে।

প্রতিনিধিঃ তাহলে আমরা কী বলতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার এক-দু মাসের মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর ছাত্রলীগের কমিটি হতে চলেছে?

লেখকঃ হ্যা।

প্রতিনিধিঃ এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন অবধারিত ভাবে চলে আসছে, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, এমন কাউকে কী নেতৃত্বে আনা হবে? ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ নং ধারাতেও বলা হয়েছে যে, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত যেকোনো বিদ্যাপীঠের ‘নিয়মিত’ শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারবেন এবং তাঁর বয়স হতে হবে অনুর্ধ্ব ২৯। আমরা ইতোপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে অবস্থানরত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি যে তাঁরাও চাইছেন, ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে, অর্থাৎ অনার্স-মাস্টার্স সবই ইতোমধ্যে শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষার পাঠ চুকিয়েছেন, এমন কেউ শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে না আসুক। এ বিষয়টি আপনি কি ভাবে দেখছেন…?

লেখকঃ ছাত্রলীগের নিজস্ব গঠনতন্ত্র রয়েছে। গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে সব উল্লেখ করা রয়েছে যে ছাত্রত্ব শেষ এবং বয়স উত্তীর্ণ, এমন কাউকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আনা যাবেনা এবং তাঁরা কর্মী হিসেবেও ছাত্রলীগ করতে পারবেন না। তাই অছাত্র কাউকে ছাত্রলীগের দায়িত্বে আনার কোনো সুযোগ নেই।

প্রতিনিধিঃ জাবি ক্যাম্পাসের ৪১ এবং ৪২ তম আবর্তনের কিছু ছাড়া প্রায় সকল শিক্ষার্থীরই ইতোমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। কিন্তু তাঁরা রাজনীতিতে এখনও এক্টিভ ভূমিকা পালন করছে, হলে অবস্থান করছে এবং সব রকমের প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশেরেই ছাত্রত্ব নেই। সেক্ষেত্রে কী আমরা ধরে নিতে পারি ৪৩ এবং ৪৪ ব্যাচের যারা বর্তমানে ছাত্রলীগ নেতৃত্বে রয়েছেন, তাঁদের মধ্য থেকে কেউ নেতৃত্বে আসতে চলেছেন?

লেখকঃ দেখুন, ছাত্রলীগের অসংখ্য ক্যাম্পাস শাখা রয়েছে এবং ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের কমিটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত নেতাদের শিক্ষাবর্ষ লক্ষ্য করি। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচের আলাদা আলাদা হিসেব রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরের ক্ষেত্রে ব্যাচের যা হিসেব রয়েছে, তা একান্তই তাঁদের আভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা আমাদের কমিটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করবো তাঁদের সেশন, ছাত্রত্বের বর্তমান অবস্থান এবং গঠনতন্ত্র অনুসারে তাঁরা যোগ্য কী না। এক্ষেত্রে ত্যাগী, মেধাবী এবং যোগ্যদেরকে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও দায়িত্বে নিয়ে আসা যেতে পারে।

প্রতিনিধিঃ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যে অনেক নেতাই রয়েছেন যারা সাংগঠনিকভাবে মেধাবী এবং দক্ষতার প্রমাণ ইতোমধ্যে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ব্যাপারে আরও কী কী বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে পারে ?

লেখকঃ আমরা ক্যাম্পাস স্বাভাবিক অবস্থানে ফেরার পরই কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রলীগের কমিটি করে দেবো। তাই এক্ষেত্রে কর্মীদের মতের মূল্যায়ন পাবে। একই সঙ্গে যারা ক্যাম্পাসের সাবেক ছাত্রনেতা রয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন, বর্তমান কমিটির যারা গুরুদায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের মতামতকেও গুরুত্ব প্রদান করা হবে। সর্বোপরি, নতুন কমিটির ক্ষেত্রে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী যারা, তাঁদের মধ্য হতে সার্বিক ছাত্রত্বের যোগ্যতার বৈধ প্রমাণ দিয়েই কমিটি প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে একটি সুন্দর সমন্বয়ের চেষ্টা করবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

প্রতিনিধিঃ বর্তমান কমিটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বর্তমান কমিটি কী তাহলে দাদা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে?

লেখকঃ না, প্রতিটি সংগঠনেরই সাংগঠনিক কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবার পরই শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন ডাকা হবে। সেই সম্মেলনের দিন শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হবে। তার আগে নয়। সম্মেলনের মাধ্যমেই আমরা নতুন কমিটি ঘোষণা করবো। আর তা হবে ক্যাম্পাস খোলার দু মাসের মাঝেই।

প্রতিনিধিঃ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে দাদা, আমাকে সময় প্রদানের জন্য।

লেখকঃ আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।